20 C
Dhaka
Sunday, November 24, 2024

বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহারে এত অসতর্কতা কেন?

চাকুরির খবর

নানা সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি উপস্থাপনে অসতর্কতা ও বিকৃতির অভিযোগ উঠেছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে হাতে নেওয়া বেশকিছু বড় কাজেও ইতিহাসের ভুল উপস্থাপনের অভিযোগ উঠেছে।

অ্যাকটিভিস্ট ও আর্কাইভ নিয়ে কাজ করছেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যাপারটি দুর্ভাগ্যজনক। এখনও দেরি হয়ে যায়নি। আমাদের উচিত হবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের একটি সমৃদ্ধ ভিজ্যুয়াল আর্কাইভ করা। নয়তো ইতিহাসের এই মূল্যবান দৃশ্যগুলো আর থাকবে না।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও আর্কাইভ নিয়ে কাজ করেন মাহবুবুর রহমান জালাল। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণের উক্তি নিয়ে যে ই-পোস্টার করা হয়েছে তাতে মারাত্মক ভুল দেখা গেছে। মাইকে ঝোলানো কোম্পানির নাম দেখে তিনি উল্লেখ করেন ছবিটি ৭ই মার্চের ছবিই নয়!

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের জন্য কয়েকটি পোস্টার প্রকাশ করা হয়। তার মধ্যে এটি একটি।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণের উক্তি নিয়ে ই-পোস্টারের শিরোনাম করা হয়েছে-’এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম- জয় বাংলা’। অথচ ছবি দেওয়া হয়েছে অন্য আরেকটি ভাষণের।

কিছুদিন আগে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি জাতীয় জ্ঞানকোষ ১০ খণ্ডে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ’ প্রকাশ করে একই ধরনের অভিযোগের মুখোমুখি হয়।

গত জানুয়ারিতে জাতির পিতার ছবি বিকৃতির ঘটনায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, জনসংযোগ কর্মকর্তাসহ দোষীদের বিরুদ্ধে সংবিধান ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যেহেতু সংবিধানের ৪(ক) অনুচ্ছেদে জাতির জনকের প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের বিষয়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, তাই এটি সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ফলে এই অংশের ব্যত্যয় ঘটালে অবশ্যই সেই ব্যক্তি ৭(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে অভিযুক্ত হবেন।

কেন একের পর এক দায়িত্বশীল কাজে এ ধরনের ভুল থেকে যাচ্ছে? এমন প্রশ্নে অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট আরিফ জেবতিক বলেন, ‘জাতিগতভাবে আর্কাইভিং বা ইতিহাস সংরক্ষণের অভ্যাস আমাদের মাঝে তেমন নেই। হাজার বছর ধরে এই ভূখণ্ডে বাস করলেও আমাদের লিখিত দলিল খুবই কম। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের মতো একটি ঘটনাও ইতিহাস বিকৃতির বেড়াজালে পড়েছে। সুতরাং, বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে যা হচ্ছে, সেটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছবির সার্বজনীন আর্কাইভ আমাদের দেশে নেই। যার কারণে গুগুলে সার্চ দিয়ে যে যেখানে যা পাচ্ছে তাই ছাপিয়ে দিচ্ছে। ৭ই মার্চের ভাষণের সেই মুহূর্ত, যে মুহূর্তটি বাঙালি জাতির সহস্র বছরের ইতিহাসকে পাল্টে দেয়, সেই সময়কার বঙ্গবন্ধুর মুখ আর দেহভঙ্গি কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা একটা বিষয়।

এর আগের-পরের হাজার ভাষণের ছবির সঙ্গে এর মিল পাওয়া যাবে না। তাঁর চোখমুখে যে তেজ, দেশ স্বাধীন করার যে দৃপ্ত প্রত্যয়, সেটি শুধু ওই মুহূর্তেরই ব্যাপার। কিন্তু এই বিষয়গুলো বোঝার মতো মানুষই তো নেই। গুগুল করে মাইক্রোফোনের সামনে একটা ছবি পেলে সেটাই বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

ব্যাপারটি দুর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এখনও দেরি হয়ে যায়নি। আমাদের উচিত বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের একটি সমৃদ্ধ ভিজ্যুয়াল আর্কাইভ করা। নয়তো ইতিহাসের এই মূল্যবান দৃশ্যগুলো কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে। পরের প্রজন্ম তাঁদের সমৃদ্ধ ইতিহাস পাঠ করা থেকে বঞ্চিত হবে।’

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর মনে করেন, ‘যার যেটা কাজ তাকে সম্পৃক্ত না করলে এধরনের অমার্জনীয় ভুলগুলো ঘটে। বিষয়গুলো জানে না বলেই ভুল করে।

দেখতে হবে কারা করছেন কাজগুলো। তারা কেবল কাজ হিসেবেই করছেন, নাকি সেটাকে ধারণ করে করছেন। আর্কাইভের বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। যারা ইতিহাস নিয়ে এ ধরনের ভুল উপস্থাপন করে তাদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনা জরুরি।’

যদিও এ ধরনের ভুলকে ভুল মানতে নারাজ কেউ কেউ। জ্ঞানকোষের প্রধান সম্পাদক হারুন অর রশিদকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এত বড় কাজে এটুকু ভুল থাকতেই পারে।’ সাইট থেকে নিলে এধরনের ভুল হবে বলেও মনে করেন তিনি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘৫০ বছরে কেউ এই কাজ করেনি। গত ৬ বছর ধরে কাজ করেছি আমরা। এরপর অনিচ্ছাকৃত ভুল যদি হয়ে থাকে সেটাকে বিকৃতি বলা ঠিক হবে না।’

- Advertisement -

আরও সাম্প্রতিক খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সর্বশেষ খবর