এমনিই ঈদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটা দুঃখ ভারাক্রান্ত সময় নিয়ে সামনে আসে। ঈদেই তার প্রিয়জন হারানোর স্মৃতি বিশেষ করে তার পিতা, মাতা, ভাই, ভাবিদের শোক তাকে কাতর করে তোলে।
এই জন্যই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আড়ম্বরপূর্ণ ঈদ উদযাপন করেন না। শুধু ঈদ কেন তার জীবনই অনাড়ম্বর। তিনি সারাক্ষণ কাজ করেন মানুষের জন্য এবং কাজের মধ্যে থেকেই তিনি ৭৫ এর ১৫ আগস্টের দুঃখ বেদনাগুলো ভুলে থাকতে চান। কিন্তু এবারের ঈদুল আযহা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আরও ব্যাতিক্রম।
দুই বছর আগে করোনামুক্ত সময় যখন ঈদ হতো তখন প্রধানমন্ত্রী ঈদের দিনও ব্যস্ত সময় কাটাতেন। সকালে তার কাছে আসতো বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিকরা। তাদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা শেষ করতে না করতেই গণভবনের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হতো সর্বস্তরের মানুষের জন্য।
সর্বস্তরের মানুষের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষ করে তিনি তার নিকট আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সময় কাটাতেন। এভাবেই ব্যস্ততা ভুলে জনগণের মাঝে থেকেই ঈদ উদযাপন করতেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু গত দু`বছরে ঈদ হচ্ছে অন্যরকম। করোনার প্রকোপের কারণে ঈদে প্রধানমন্ত্রীর যে শুভেচ্ছা বিনিময় কর্মসূচি তা হচ্ছে না। আর এ কারণেই প্রধানমন্ত্রীর ঈদ কাটছে এক রকম ঘরবন্দি এবং একাকিত্বে ভরা।
এবারের ঈদুল আজহা প্রধানমন্ত্রীর জন্য আরও বেশি একাকিত্বকে এনে দিয়েছে। কারণ প্রায় প্রতি ঈদই দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা ছুটে আসেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটু সময় কাটান। দুজন মিলে ১৫ আগস্টে দুঃসহ স্মৃতিকে ভাগাভাগি করে নেন। কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা দেশে নেই। তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন।
প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। করোনার জন্য তিনি দেশে আসেননি। প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল দেশে ছিলেন। কিছুদিন আগে তিনি আবার চলে গেছেন কানাডায়।
ফলে প্রধানমন্ত্রীর এবারের ঈদ উৎসব বড্ড একাকীত্বে এবং একদিকে তিনি পারছেন না দলের নেতাকর্মী এবং সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলতে, তাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে অন্যদিকে তার একান্ত আপনজনরাও তার থেকে দূরে। তবে প্রধানমন্ত্রীর এবার ঈদ উদযাপন হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল পদ্ধতিতে।
প্রধানমন্ত্রী ঈদের দিন তারা পুত্র, কন্যা, নাতি-নাতনীদের সাথে কথা বলেছেন। ভিডিও কনফারেন্সে তিনি তার বোনের সঙ্গেও কথা বলেছেন। আর এই ডিজিটাল পদ্ধতিতেই সকলের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে সকলের সঙ্গে সময় কাটিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঈদ উদযাপন করেছেন। তবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে বড় শক্তি হলো জনগণ।
এই সব ঈদগুলোতে তিনি সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আবেগ অনুভূতি প্রকাশ করে এবং মানুষের সংস্পর্শে থাকলেই শেখ হাসিনা সবচেয়ে ভালো থাকেন এবং এই মানুষের সংস্পর্শে থাকার জন্যই হয়তো তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজ করতে পারছেন।
দুঃখ-বেদনা সবকিছু চাপা রেখে শুধু মানুষের জন্যই তিনি তার জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। আর এবার করোনা এমন এক পরিস্থিতিতে নিয়ে গেছে যে জনগণ থেকেই প্রধানমন্ত্রীর এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। আর তাই এবারে ঈদটা শেখ হাসিনার জন্য একটু অন্যরকম ঈদ, একটু একাকিত্বের ঈদ।