ঢাকাই সিনেমার আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমণি ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযােগ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ঢাকা বোট ক্লাবে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও ও তার বন্ধু অমিসহ কয়েকজন মদ খেয়ে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে এবং তাকে মারধর করে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ সাভার থানায় ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরীমণি। এরই মধ্যে নাসির উদ্দিন ও অমিসহ ৫ জন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন।
গ্রেফতার হওয়ার পর নাসির উদ্দিন পুলিশকে বলেছেন যে, ওই দিন রাতে পরীমণিরা মাতাল অবস্থায় এসেছিল এবং তারা ক্লাবের সদস্য না হওয়ার পরও ক্লাবে বাড়াবাড়ি করেছিল। কোন পক্ষের বক্তব্য সত্যি সেটা আমাদের বিবেচনার বিষয় নয়।
যেহেতু এ বিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে এবং এটি বিচারাধীন বিষয়, সেহেতু বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য আমরা করতে চাই না। তবে পরীমণি কেন, কোনো নারীর প্রতিই অমর্যাদা আমরা সমর্থন করি না। এটি হওয়া উচিৎ না। এই ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত, দুর্ভাগ্যজনক এবং এই ঘটনার জন্য যারাই দায়ি তাদের বিচার হওয়া উচিৎ।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প বলতে গেলে ধুকতে থাকা একটি শিল্প যেখান থেকে বছরে অল্প কিছু সংখ্যক সিনেমা মুক্তি পায়। এর মধ্যেও আবার যুক্ত হয়েছে করোনা। এমনিতেই হলে দর্শক থাকে না তার ওপর এই করোনার কারণে অনেক সিনেমাতেই দর্শক একেবারেই নেই।
সিনেমা হলগুলো বন্ধ প্রায়। সেখানে এই শিল্পের একজন নায়িকা হিসেবে তার জীবনযাপন কেমন হবে সেটি সবারই জানা। আর এই পরিস্থিতিতে পরীমণির নায়িকা হিসেবে এই শিল্পে উত্থান একটি বিস্ময় বটে।
কারণ পরীমণি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে এখনাে উল্লেখযোগ্য তেমন সিনেমাতে অভিনয় করতে পারেন নি। সেখানে তার এই উত্থান অনেককেই বিস্মিত করে। অনেকেই খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন এই উত্থানের রহস্য।
পরীমণির অভিনিত সিনেমার সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকটি। এর মধ্যেই তার যে বিলাসবহুল জীবন সেখানে সবার কপালে একটু চিন্তার ভাঁজ তৈরি করে। অনেকের মনেই প্রশ্ন আসে কিভাবে এতো বিত্ত বৈভবে চলেন পরীমণি?
পরীমণির সঙ্গে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা কারোর কাছেই কাম্য নয়। এই বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট সহানুভূতি রয়েছে। কিন্তু প্রশ্নটা হলো এই বিষয়টি কেন পরীমণির সঙ্গেই ঘটলো। এটি কি তার এই বিলাসী জীবন যাপনের ফল?
ক্যারিয়ারে খুব বেশি সিনেমার তালিকায় না থেকেও নিজেকে খুব বড় তারকা মনে করেন তিনি। সেই অভিযােগ অনেকেরই। তাছাড়া হাতে গোনা কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করে কীভাবে এই নায়িকা রাজকীয় জীবনযাত্রায় মেতে ওঠেন তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন!
এরই সঙ্গে খামখেয়ালি স্বভাবের এই নায়িকা ব্যক্তিগত জীবনেও বেশ আলোচিত। একের পর এক প্রেমিক বদলানো আর বিয়ে নিয়ে বহুবার শিরোনামে উঠেছেন। অভিযোগটি এমন যে, এ যেনো তার পেশায় পরিণত হয়েছে।
রঙিন জগতে পা রাখার আগে জল কম ঘােলা করেননি পরীমণি। সে কথা অনেকেরই অজানা। তবে মিডিয়ায় প্রবেশ করে অনেকের সঙ্গেই জড়িয়েছেন তিনি। বিশেষ করে লাভগুরু তামিমের সঙ্গে প্রেম কারও অজানা নয়। বিষয়টা ছিল ওপেন সিক্রেট।
এ বিষয়ে পরী বেশ খোলামেলা আলোচনাই করেন। নিজের ফেসবুক পেজে ওই সময় প্রিয় মানুষটির সঙ্গে বিভিন্ন মূহুর্তের ছবি প্রকাশ করতেন। হঠাৎ সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান দেন বিয়েটা তাহলে পুরান ঢাকায়-ই করতেছি।
পরীমনির তখনকার প্রেমিক তামিমের বাড়ি পুরান ঢাকায়। পেশায় তিনি সাংবাদিকতা করেন। দীর্ঘ সময় বিনোদন সাংবাদিকতার পাশাপাশি এফএম রেডিও ‘রেডিও আমার’ এর জনপ্রিয় অনুষ্ঠান লাভগুরুর উপস্থাপনা করতে গিয়ে শ্রোতাদের কাছে পরিচিতি পান লাভগুরু হিসেবে। তাদের বিয়ের অনেকদূর গড়িয়েছিল। তামিম হাসানের সঙ্গে পরীমনির বাগদানও হয়েছিল। যদিও বিয়ের আগেই তা ভেঙে যায়।
এরপর হঠাৎ করেই নাটকীয়ভাবে বিয়ে করেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের অন্যতম নায়িকা পরীমনি। পাত্র নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের নির্দেশক ও সদস্য কামরুজ্জামান রনি। গত ১০ মার্চ রাতে রাজধানীর রাজারবাগ এলাকায় ছোট পরিসরে দুজনার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
পরীমনির সঙ্গে রনির দেখা হয় বিয়ের মাত্র পাঁচ মাস আগে। অভিনেত্রী ও নির্মাতা হৃদি হকের ‘১৯৭১: সেই সব দিন’ সিনেমার সূত্র ধরেই তাদের পরিচয়, প্রেম ও বিয়ের সিদ্ধান্ত। এই সিনেমার সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন রনি। যাতে নায়িকা পরীমনি।
এই সিনেমাতে কাজ করতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি হয়। তারপর বিয়ে। মাত্র তিন টাকার কাবিনে বিয়ে করেছিলেন তারা। কিন্তু বিয়ের তিন মাস না কাটতেই সংসার ভাঙে তার। এরপর থেকে একাই থাকছেন।
এখন তার বিলাসী জীবন দেখে রীতিমতো চোখ কপালে ওঠে। তার ভালো লাগছে তিনি মন ভালো করতে এবং ঘুরতে চলে যান দুবাইয়ে। সেখানে গিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। দামি শপিং করেন। মন ভালো লাগছে না গড়ি কিনে ফলেন আবার সেটি ভালো না লাগলে ভেঙে ফলেন। বলা চলে এক ধরনের বিলাসী অবস্থার মধ্য দিয়ে তার জীবন চলতো।
এরই মধ্যে এই ঘটনা জনমনে প্রশ্ন এনে দিয়েছে। যদিও আমরা অনেক আনন্দিত যে পরীমণির সঙ্গে যা ঘটেছে সেটি নিয়ে তিনি প্রতিবাদ করেছেন এবং তাকে দেখে অনেকেই এখন প্রতিবাদ করার সাহস পাবে।
তবে পরীমণিরও উচিৎ হবে এই ধরনের জীবনযাপনের লাগাম টেনে ধরার। তাহলে হয়ত তার জন্যই ভালো কিছু বয়ে আনবে। এখন দেখার বিষয় পরীমণির মামলার তদন্ত কোন দিকে মোড় নেয়।
বাংলা ইনসাইডার