গত জুলাই মাস থেকে এ পর্যন্ত পদ্মা সেতুর বিভিন্ন পিলারে মোট পাঁচবার ধাক্কা লেগেছে। গত চার দিনের ব্যবধানে দুবার ধাক্কা লাগল।
বারবার ধাক্কা লাগার ঘটনাকে বিভিন্ন মহল থেকে অদক্ষতা, অযোগ্যতা কিংবা স্রেফ দুর্ঘটনা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এই ঘটনার পিছনে একটি গভীর ষড়যন্ত্র আছে বলেই অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
অনুসন্ধানের প্রাথমিক তথ্যে বলা হচ্ছে যে, এটি স্রেফ দুর্ঘটনা নয়। এর পেছনে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র রয়েছে। আর এই ষড়যন্ত্রের রহস্য উন্মোচন করতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে আরেকটু পিছনে।
আশির দশকের শেষ দিকে জিয়া পরিবার লঞ্চ ব্যবসা শুরু করে এবং নব্বই দশকে তাদের এই লঞ্চ ব্যবসা ফুলে-ফেঁপে ওঠে।
কোকো-১, কোকো-২ থেকে শুরু করে খুব কোকো-৬ পর্যন্ত লঞ্চ নামিয়েছিল জিয়া পরিবারের সদস্যরা। এই লঞ্চ ব্যবসায় তারেক জিয়ার পার্টনার ছিলেন খালেদা জিয়ার ভাই প্রয়াত সাঈদ ইস্কান্দার।
পরবর্তীতে গিয়াসউদ্দিন মামুন এই ব্যবসায় যুক্ত হন, তার ভাই হাফিজ ইব্রাহিমও এই লঞ্চ ব্যবসায় যুক্ত হন। পরবর্তীতে সিলভার সেলিম (হাওয়া ভবনের অন্যতম ডোনার) এ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন এবং এর ফলে লঞ্চ ব্যবসায় একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছিল, যে সিন্ডিকেটটি নিয়ন্ত্রণ করত জিয়া পরিবাররা।
এই সময় ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত লঞ্চ শ্রমিক-কর্মচারী ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরিভাবে চলে গিয়েছিল হাওয়া ভবন এবং বিএনপি`র হাতে।
এই সময় আওয়ামী লীগ যখন বিভিন্ন ইস্যুতে হরতাল পালন করত তখন লঞ্চ শ্রমিক-কর্মচারীরা হরতালের বিরোধিতা করত। এরকম অন্তত পাঁচটি ঘটনা পাওয়া গেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে যে, লঞ্চ শ্রমিকদের সঙ্গে গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের ভাই হাফিজ ইব্রাহিম, গিয়াসউদ্দিন মামুন, তারেক জিয়া বৈঠক করেছেন, তাদেরকে উৎসাহ দিয়েছেন, প্রণোদনা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আস্তে আস্তে জিয়া পরিবারের এই লঞ্চ ব্যবসায় ভাটা পড়ে কিন্তু লঞ্চ এবং ফেরিতে তাদের যে কর্মচারী ইউনিয়নের নেটওয়ার্ক সে নেটওয়ার্কটি বহাল রয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এখনো নৌযান শ্রমিকদের একটি বড় অংশ তারেক জিয়া এবং বিএনপির অনুসারী। তারা বিএনপির রাজনীতি করেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর লঞ্চ-ফেরি শ্রমিকদের মধ্যে আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠা বা আওয়ামী লীগ দেখানোর একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে বটে কিন্তু আদতে তারা কট্টর বিএনপির রাজনীতি করে এবং এদের সঙ্গে মামুন, তারেক এবং সিলভার সেলিম গংদের যোগাযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ নৌ চলাচলের বিষয়টি পুরোপুরি ভাবে এখনো বিএনপি এবং জিয়া পরিবার নিয়ন্ত্রিত বলে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়।
একই সাথে ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সময় বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়টি বিএনপি জামায়াত নিয়ন্ত্রিত এবং এই মন্ত্রণালয়ের অন্তত চারজন বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জামাত এবং বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়।
এরকম একটি সমীকরণে পদ্মা সেতুর ওপর বারবার ফেরির ধাক্কার সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র আছে কিনা, সেটা খুঁজে দেখা দরকার বলে অনেকে মনে করছেন।
যাদের নৌচলাচল সম্বন্ধে ন্যূনতম জ্ঞান আছেন তারা বলেন যে, শ্রমিকরা এত অদক্ষ হতে পারেনা যে বারবার পদ্মা সেতুর পিলারে তারা ধাক্কা লাগবে।
একটি পিলারের সঙ্গে আরেকটি পিলারের দূরত্ব দেড়শ ফিট। কাজেই, কোন অবস্থাতেই এই ধাক্কা লাগার ঘটনাটা স্বাভাবিক ঘটনা নয়।
লঞ্চ এবং ফেরি শ্রমিকদের রাজনৈতিক পরিচয় এবং যারা এই ধাক্কা গুলো লাগাচ্ছে তাদের ব্যাপারে গভীর অনুসন্ধানের মাধ্যমে এদের প্রকৃত চিত্র উদঘাটন করা সম্ভব বলে অনেকে মনে করছেন।
বাংলা ইনসাইডার