বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট ২০২৩-এর আন্দোলন নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ফ্রান্সে নির্বাসিত রাজনৈতিক ভাষ্যকার পিনাকী ভট্টাচার্য এটিকে সাম্প্রতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অভিব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে তার মতে, এই আন্দোলনকে আগের বিপ্লবী প্রচেষ্টার ধারাবাহিক রূপ না ভেবে দেখতে হবে এক নতুন বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে-যেখানে জনগণের আকাঙ্ক্ষা স্পষ্ট হলেও কাঠামোগত সংস্কারের অনুপস্থিতি গভীর সংকটের জন্ম দিচ্ছে।
ভট্টাচার্য জোর দিয়ে বলেন, “বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও নিরাপদ নির্বাচন আয়োজনে যতই দাবি উঠুক, তার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক কাঠামোর ভিত্তিগত সংস্কার।” তার মতে, একটি দল বা সরকার পরিবর্তন করলেই গণতন্ত্র আসবে না, যদি না রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হয়। তিনি বলেন, “যে রাষ্ট্র তার গোড়াতেই দুর্বল, যেখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দলীয়করণে আক্রান্ত, সেখানে কেবল নির্বাচন দিয়ে কিছুই পাল্টাবে না।”
বর্তমান সরকারের সমালোচনায় ভট্টাচার্য বলেন, “এই সরকার কেবল নীতিগত নয়, পদ্ধতিগতভাবেও ব্যর্থ। তারা জনগণের বিশ্বাস অর্জনে আগ্রহী নয়; বরং ক্ষমতায় থাকার জন্য সব ধরনের অপকৌশল ও দমনমূলক কৌশল প্রয়োগ করে।” তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতন, বিরোধী কণ্ঠর ওপর নিয়ন্ত্রণ, এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অসহায়ত্বকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন। তার মতে, সরকার রাষ্ট্রীয় শক্তিকে ‘ব্যক্তিগত দখলে’ পরিণত করেছে-এটি যে কোনো রাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সংকটের ইঙ্গিত বহন করে।
ভট্টাচার্য জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের চরিত্র ব্যাখ্যা করে বলেন, এটি ছিল মূলত তরুণ ও নাগরিক সমাজের মধ্যে দীর্ঘদিন জমে থাকা অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ। তবে তিনি মনে করেন, এই আন্দোলন একটি সুসংগঠিত বিপ্লবী কাঠামোর অভাবে শেষ পর্যন্ত কার্যকর রাজনৈতিক চাপে রূপ নিতে পারেনি।
“জনগণ রাস্তায় নেমেছে ঠিকই,” তিনি বলেন, “কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিকল্প, নেতৃত্ব এবং এক সুসংবদ্ধ রূপরেখা না থাকলে এসব আন্দোলন বারবার দমন হবে, অথবা ক্ষমতাসীনদের পক্ষে কাজে লাগবে।”
ভট্টাচার্য ভবিষ্যৎ নিয়ে একদিকে যেমন উদ্বেগ প্রকাশ করেন, তেমনি সম্ভাবনার কথাও বলেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ছে এবং তরুণরা অন্যায় ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছে। তবে এই শক্তিকে সংগঠিত, কাঠামোবদ্ধ ও নীতিনির্ভর রাজনৈতিক প্রস্তাবে রূপ দিতে না পারলে এর ফলাফল হতে পারে হতাশাজনক।