২০১৮ সালের উত্তাল নিরাপদ সড়ক আন্দোলন কেবল বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের প্রতিবাদেই সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি হয়ে উঠেছিল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বিরুদ্ধে এক প্রতীকী প্রতিবাদ। এই আন্দোলনের সময়ই পিনাকী ভট্টাচার্য-একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, লেখক এবং সমাজমাধ্যমের সক্রিয় কণ্ঠ -দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই কর্তৃক তলব হন। এ ঘটনার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যেতে বাধ্য হন এবং পরে ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন।
ভট্টাচার্য জানান, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় তিনি আন্দোলনকারী ছাত্রদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখি করেন। এর জেরে ডিজিএফআই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকে, যা ছিল স্পষ্টতই একটি ভীতিকর ও হুমকিমূলক পদক্ষেপ। এই পরিস্থিতি তাকে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য করে। নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি দেশত্যাগ করেন এবং শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন।
পিনাকী ভট্টাচার্য বাংলাদেশি অভিজাত শ্রেণীর তীব্র সমালোচনা করেন। তার মতে, এ শ্রেণী-যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, নীতিনির্ধারণ এবং অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে-দেশের দুর্ভোগ, বৈষম্য এবং দুর্নীতির জন্য মূলত দায়ী। তিনি বলেন, শ্রমিক শ্রেণী-যেমন গার্মেন্টস, নির্মাণ, কৃষি ও প্রবাসী শ্রমিকরা-দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলেও, উপার্জিত সম্পদ থেকে তারা বঞ্চিত হয়। সম্পদ ও সুযোগ কুক্ষিগত করে রাখে কিছু নির্দিষ্ট পরিবার ও গোষ্ঠী।
সমালোচনার ভাষা হিসেবে ভট্টাচার্য অনেকসময়ই বেছে নেন কঠোর, এমনকি অপমানসূচক শব্দ। তার মতে, এটি কৌশলগত। তিনি বলেন, “এই ভাষা ব্যবহারের উদ্দেশ্য অভিজাতদের চ্যালেঞ্জ জানানো এবং জনগণকে জাগানো। যদি আপনি প্রথাগত ভদ্র ভাষায় কথা বলেন, তবে এরা কানে তুলবে না। আমি তাদের বিব্রত করতে চাই, কারণ ওরা সাধারণ মানুষকে প্রতিদিন লাঞ্ছিত করে।”
তার মতে, ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে থাকা অন্যায় ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ছাড়া সাধারণ মানুষকে জাগ্রত করা কঠিন। এই ভাষা, তাঁর মতে, প্রতিবাদী রাজনীতির একটি কৌশল।