২৬ এপ্রিল গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে মারা যান মুনিয়া। তার মৃত্যুর পরপরই তার বড় বোন নুসরাত তানিয়া আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন।
সেই মামলার তদন্ত এখন শেষ পর্যায়ে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে যে, তারা এখন পোস্টমর্টেম রিপোর্টের অপেক্ষা করছেন। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট খুব শীঘ্রই পাওয়া যাবে বলেও তারা আশা করছেন।
এই মামলায় বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত আত্মহত্যার প্ররোচনার কোন অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, মুনিয়া স্বাভাবিক অবস্থাতেই ছিলেন এবং আত্মহত্যার আগে তাকে কেই প্ররোচিত বা উত্তেজিত করেনি। প্রশ্ন উঠেছে যে, কেউ যদি চাপ সৃষ্টি না করে তাহলে কেন মুনিয়া আত্মহত্যা করলেন।
বিশেষ করে আত্মহত্যার আগে মুনিয়ার সঙ্গে নুসরাত দফায় দফায় কথাবার্তা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এ ব্যাপারে তিনটি সম্ভাবনা নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা এগোচ্ছেন।
প্রথমত, নুসরাত চাপ সৃষ্টি করেছিলেন: নুসরাত বিভিন্ন সময় মুনিয়াকে ব্যবহার করতেন। মুনিয়াকে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতেন। আর এ কারণেই বিভিন্ন সময় মুনিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করতেন নুসরাত। সেই রকম একটি চাপে মুনিয়া আত্মহত্যা করেছেন কিনা এটি বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, মুনিয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু: মনে করা হচ্ছে যে, যেহেতু নুসরাতের সঙ্গে মুনিয়া বিভিন্ন সময়ে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলেছেন, সেখানে অন্য কেউ এই বাড়িতে প্রবেশ করে মুনিয়াকে হত্যা করে অন্য কোন নাটক সৃষ্টির চেষ্টা করেছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কারণ ইতিমধ্যে মুনিয়ার বড় ভাই সবুজ একটি হত্যা মামলার অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। মুনিয়াকে মেরে ফেললে কাউকে ফাঁসি দেওয়া যাবে এরকম একটি হিসেব নিকেশ থেকে তৃতীয় পক্ষ ফায়দা লোটার জন্য এই কাণ্ড করেছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে তদন্তে।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, মুনিয়ার সঙ্গে যে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং মানুষের সম্পর্ক ছিল সেটি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। আর সে কারণেই কোন কোন মহল মুনিয়াকে হত্যা করে সেই হত্যার দায় অন্য কারোর ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা করেছে কিনা তা এ মামলার অন্যতম তদন্তের উপজীব্য বিষয়।
তৃতীয়ত, মুনিয়া মাদক সেবন করতেন কিনা: তদন্তে মনে করা হচ্ছে যে, মুনিয়া কি কোন মাদক সেবন করতেন কিনা। সাধারণত দেখা যায় যারা অতিরিক্ত মাদক সেবন করে তাদের আত্মহত্যা প্রবণতা বেড়ে যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে এলএসডি গ্রহণ করে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর আত্মহননের কথার প্রেক্ষিতে মুনিয়ার মৃত্যু তদন্ত নতুন মোড় নিয়েছে।
মুনিয়া কি বিভিন্ন নিষিদ্ধ ড্রাগস গ্রহণ করতেন কিনা সেটিও এখন খতিয়ে দেখার প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। কারণ কিছু কিছু ড্রাগস আছে, যে ড্রাগসগুলো মানুষকে আত্মহত্যা প্রবণ করে ফেলে। আর মুনিয়া এরকম মাদক সেবন করতেন কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করা হচ্ছে।
মুনিয়ার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র বলছেন যে, মুনিয়া নিয়মিত মাদক সেবন করতেন এবং বিভিন্ন ধরনের মাদকের তিনি আসক্ত ছিলেন। আর তাই অনেকেই মনে করছেন যে, যদি প্রথম দুটি কারণে না হয়, তাহলে মুনিয়ার আত্মহত্যার প্রধান কারণ হতে পারে অতিরিক্ত মাদকাসক্তি।
নিয়মিত মাদক সেবনের কারণে তিনি হয়তো আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠেছিলেন। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন যে, তারা কোনো বিষয়েই এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া হননি।
পোস্টমর্টেম রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছেন। পোস্টমর্টেম রিপোর্টের পরপরই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে সংশ্লিষ্ট মহল বলছেন যে, নুসরাত তানিয়ার মামলাটি যে গ্রহণযোগ্য নয়, এটি এক মাসের তদন্তে মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে গেছে।
বাংলা ইনসাইডার