মুনিয়ার মৃত্যুর দুই মাস পূর্ণ হতে চলেছে। ২৬ এপ্রিল গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে মারা যান মুনিয়া। তার মৃত্যুর পরপরই তার বড় বোন নুসরাত তানিয়া গুলশান থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন।
এই মামলার তদন্ত করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে যে, তারা এখন অপেক্ষা করছেন ময়নাতদন্তের রিপোর্টের। তবে দুই মাসের তদন্তে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে বলেই বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে, নুসরাত বোনের জন্য ভালোবাসা বা বোনের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য এই মামলা করেননি।
বরং তিনি মামলা করেছেন নিজের অপরাধ ঢাকার জন্যই। মুনিয়ার মৃত্যুর পর নুসরাত ফেঁসে যেতে পারেন এবং নুসরাত এর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উত্থাপিত হতে পারে এই আশঙ্কা থেকে তড়িঘড়ি করে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলাটি করেছেন।
যাতে মুনিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি অন্য খাতে প্রবাহিত হয়। তদন্তে দেখা যাচ্ছে যে, নুসরাত মুনিয়ার মৃত্যুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক অপরাধ করেছেন।
প্রথমত, নুসরাত তার নিজের এবং তার স্বামীর ভোটার আইডি কার্ড ব্যবহার করে তিনি থাকবেন বলে গুলশানের ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন। এটি স্পষ্টতই প্রতারণা এবং অপরাধ।
বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী যিনি ভাড়া নিবেন সে বাড়িতে ঘটা সবকিছুর দায় দায়িত্ব তার। কাজেই মুনিয়ার মৃত্যুর দায় প্রধানত বহন করতে হবে নুসরাতকে।
দ্বিতীয়ত, একজন বড় বোন হিসেবে একটি কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে কিভাবে তিনি একা একটি ফ্ল্যাটে এবং বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে রাখলেন সে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যে প্রশ্নের সদুত্তর নুসরাত কোন পর্যায়ে দিতে পারেনি।
তৃতীয়ত, মুনিয়া লাখ টাকার ফ্ল্যাটের ভাড়া কোথা থেকে মেটাতেন, তার বিলাসবহুল জীবনের উৎস কি ছিল এই প্রশ্নের উত্তরও নুসরাত দিতে পারেননি।
আর এখান থেকেই বিভিন্ন রকম তথ্য বেরিয়ে এসেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে যে নুসরাত আসলে মুনিয়াকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতেন এবং মুনিয়া ছিল নুসরাতের টাকা বানানোর মেশিন। মুনিয়াকে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করেই নুসরাত চলতেন।
চতুর্থত, নুসরাতের পারিবারিক জীবনেও ছিল না রকম টানাপোড়েন। তার বাবার মৃত্যুর পর তাদের সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে নানারকম বিরোধ ছিল। আর এই সমস্ত বিরোধের কারণে নুসরাত তার ভাইয়ের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন।
মুনিয়ার মৃত্যু নিয়ে মামলা করলে লাইমলাইটে আসা যাবে বিশেষ করে আলোচিত ব্যক্তিকে যদি আসামি করা যায় তাহলে রাতারাতি মুনিয়া পরিচিত মুখ হবেন এবং তাহলে থানা, পুলিশ ইত্যাদির সঙ্গে তার পরিচয় হবে এবং তার পৈত্রিক সম্পত্তি দখলের মামলায় তিনি এগিয়ে যেতে পারবেন। এরকম একটি বিচার থেকে নুসরাত তড়িঘড়ি করে মামলা করেছিলেন।
পঞ্চমত, নুসরাত মুনিয়ার মৃত্যুর জন্য অনেকাংশে দায়ী ছিলেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যাচ্ছে। বিশেষ করে মুনিয়ার সঙ্গে তার দুর্ব্যবহার, মুনিয়াকে মেরে ফেলার হুমকি, মুনিয়াকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা ইত্যাদি নিয়ে মুনির সঙ্গে তার টানাপোড়েন হয়েছিল খুব স্পষ্ট।
আর এই সমস্ত টানাপোড়েনের কারণেই নুসরাতই মুনিয়াকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়েছেন কিনা বা নুসরাতের চাপে মুনিয়া আত্মহত্যা করেছে কিনা অথবা মুনিয়াকে হত্যা করে নুসরাত তার মনের ঝাল মিটিয়েছেন কিনা সেটিও তদন্তের বিষয় বলে মনে করা হচ্ছে। গত দুই মাস এই ঘটনার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে আসলে নুসরাত নিজে অপরাধ করেছেন এবং তার অপরাধ ঢাকার জন্যই তিনি মামলা করেছেন।
বাংলা ইনসাইডার