জরিপে অংশ নেওয়া ৮৮ শতাংশ বিজ্ঞানী বলেছেন, অধিকাংশ দেশে টিকাদানের হার কম থাকার কারণেই প্রতিষেধক-সহনশীল অভিযোজনের সম্ভাব্যতা বাড়বে বিশ্বের হাতে আর এক বছর, বা তার চাইতেও কম সময় আছে!
কারণ এর মধ্যেই কার্যকারিতা হারাবে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে আবিষ্কৃত প্রথম প্রজন্মের টিকাগুলো। তখন দরকার হবে বিদ্যমান টিকার ফর্মূলা উন্নতকরণসহ সার্স কোভ-২ জীবাণুর নতুন ধরন মোকাবিলায় দ্বিতীয় প্রজন্মের টিকা আবিষ্কার।
মহামারি, জীবাণু এবং সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সাম্প্রতিক এক জরিপ চালানো হলে, তাদের অধিকাংশই সেখানে এমন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।
সন্তোষজনক মাত্রায় কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে হলে বিশ্বব্যাপী জোরদার টিকা কর্মসূচি প্রয়োজন- একথা বিজ্ঞানীরা অনেক আগে থেকেই গুরুত্ব দিয়ে বলে আসছেন।
তাদের এই গুরুত্বারোপের পেছনে প্রধান উদ্বেগ ছিল, অভিযোজনের ফলে জন্ম নেওয়া অণুজীবের নতুন ধরন। ধরনগুলো আরও সংক্রামক ও প্রাণঘাতী রূপ নিয়ে বিদ্যমান টিকাকে অকার্যকর করবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
ইতোমধ্যেই, তাদের আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত করে, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল ও যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হয়েছে নতুন ও শক্তিশালী বেশকিছু ধরন। প্রতিবেশী ভারতে শনাক্ত হয়েছে দুইবার অভিযোজিত আরেকটি ভ্যারিয়ান্ট। এখানেই শেষ নয়, জীবাণুর এই বিকাশ সামনের দিনেও মারাত্মক হতেই থাকবে।
এ অবস্থায় সাম্প্রতিক জরিপে অংশ নেওয়া দুই-তৃতীয়াংশ বিজ্ঞানী এক বছর বা তারও কম সময়ের আভাসটি দিয়েছেন। সমীক্ষাটি পরিচালনাকারী জোট- পিপলস ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স একথা নিশ্চিত করে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, অক্সফাম এবং ইএনএইডস- এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই জোটের সদস্য। ২৮টি দেশের ৭৭ জন বিশিষ্ট বিজ্ঞানীর মধ্যে জরিপ চালানো হয়। তাদের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ মনে করছেন, প্রথম প্রজন্মের ভ্যাকসিন অকার্যকর হওয়ার আগে ৯ মাস বা তারও কম সময় পাওয়া যাবে।
জরিপে অংশ নেওয়া ৮৮ শতাংশ বিজ্ঞানী বলেছেন, অধিকাংশ দেশে টিকাদানের হার কম থাকার কারণেই প্রতিষেধক-সহনশীল অভিযোজনের সম্ভাব্যতা বাড়বে।
ইয়েল ইউনিভার্সিটি, জনস হপকিনস, ইম্পেরিয়াল কলেজ, লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও ইউনিভার্সিটি অব এডিনব্যুরোর মতো বিশ্বের খ্যাতনামা উচ্চ বিদ্যাপীঠে কর্মরত এসব বিজ্ঞানীরা। মহামারি প্রতিরোধ ও টিকা গবেষণাতেও তাদের অনেকেই রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি বিদ্যার সহকারী অধ্যাপক গ্রেগ গঞ্জালভেস এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রতিদিনই নতুন অভিযোজনের উদ্ভব ঘটছে।
কোনো কোনোটি এমন বিশেষত্ব লাভ করবে যা পূর্বজদের তুলনায় তাদের আরও সফলভাবে টিকে থাকার উপযোগী করে তুলবে। ভাগ্যশালী এসব ধরন আরও কার্যকরভাবে মানবদেহে অনুপ্রবেশ করতে পারবে এবং কেউ কেই হয়তো রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে পূর্ববর্তীদের তুলনায় আরও সফলভাবে ফাঁকিও দিতে পারবে।”
“পুরো বিশ্বকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকার আওতায় না এনে আমরা জীবাণুদের অভিযোজনের পথ সুগম করে তুলছি। নিঃসন্দেহে এই সুযোগে আরও মারাত্মক সব ধরন নিয়ে আবির্ভূত হবে সার্স কোভ-২, তখন প্রথম প্রজন্মের টিকাগুলোকে অতিরিক্ত বুস্টার ডোজেরও সাহায্য নিতে হবে,” তিনি যোগ করেন।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান