একদিকে করোনার প্রকোপ অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা। এর মধ্যে বিএনপির রাজনৈতিক অস্তিত্বের সংকট। কিন্তু তারপরও থেমে নেই বিএনপির চেষ্টা।
বিএনপি এখন নতুন একটি জোটের জন্য চেষ্টা করছে বলে একাধিক বিএনপি নেতা স্বীকার করেছেন। গত ১৪ বছর ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। এই ১৪ বছরে বিএনপি বিভিন্ন রকম জোট গঠনের চেষ্টা করেছে। তাদের যে মূল জোট ২০ দলীয় জোটের ইতিমধ্যে ভাঙ্গন ধরেছে। ২০ দলীয় জোট থেকে কয়েক বছর আগে বেরিয়ে গেছেন বিজেপি নেতা আন্দালিব রহমান পার্থ এবং আরো কিছু দল।
তারপরও ২০ দলীয় জোট কাগজে-কলমে রয়েছে। ২০ দলীয় জোটকে নিয়ে প্রকাশ্যে আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হল জামায়াত। কারণ জামায়াত বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিএনপি`র গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হয়। এজন্য ২০ দলীয় জোট কাগজে-কলমে থাকলেও এটির কোন তৎপরতা নেই।
দীর্ঘদিন ধরে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকও হয় না। কিছুদিন আগে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া নিয়ে বিএনপির মধ্যেই তোলপাড় শুরু হয়েছিল।
বিএনপির বিভিন্ন নেতারা বলছেন যে লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে ২০ দলীয় জোটকে রাখতে চান না। আর এ কারণেই ২০ দলীয় জোট এখন অকার্যকর। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে নাটকীয়ভাবে বিএনপি নাটকীয়ভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিল। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত এই জোট একটি নির্বাচনী জোট ছিল।
কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, নির্বাচনের পরও এই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থাকবে। কিন্তু নির্বাচনে জামাতকে ধানের শীষ প্রতীক উপহার দিয়ে ২০টি আসনে জামায়াতের প্রার্থীদেরকে দেওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। তাছাড়া বিএনপির মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে বিশেষ করে ড. কামাল হোসেন সহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা থাকায় বিএনপির কারো কারো মধ্যে আপত্তি রয়েছে। বিএনপি নেতারা মনে করেন যে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিএনপির আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক।
সে কারণে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও এখন অকার্যকর হয়ে গেছে। এককভাবে আন্দোলনের চেষ্টা বিএনপি কিছুদিন ধরে করেছিল কিন্তু বিএনপির আন্দোলন করার মতো শক্তি, নেতৃত্ব এবং মেধা কোনটাই তাদের নেই। আর এ কারণেই তারা মনে করছে যে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে টিকে থাকার জন্য জোটগত আন্দোলনের বিকল্প নেই।
বিএনপি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এখন বৈঠক করছে একটি নতুন মোর্চা গঠন করার জন্য। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে, সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং সকল মত-পথের মানুষকে একত্রিত করতে হবে। কিন্তু এ নিয়ে বিএনপি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগও করেছে।
রাজনীতির মাঠে যে সমস্ত দলগুলির সক্রিয় এবং যারা সরকারের বিভিন্ন বিষয়ের সমালোচক তাদের সঙ্গেই কথা বলছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে এই কথা বলার ক্ষেত্রে বিএনপির জন্য সামনে তিনটি বাঁধা অত্যন্ত বড় হয়ে এসেছে। প্রথমত, জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক। বৃহত্তম যে বৃহত্তর মঞ্চ করতে চাচ্ছে সেখানে বাম এবং উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে রাখতে চাচ্ছে। সেখানে তাদের মূল বাধা হল জামায়াত। বামফ্রন্ট দীর্ঘদিন ধরেই স্বাতন্ত্র্য অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছে।
তারা বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে আগ্রহী নয়। বাম গণতান্ত্রিক জোটের একজন নেতা বলেছেন যে, বিএনপি যে রাজনৈতিক চরিত্র তা তার সাথে বাম রাজনৈতিক আদর্শে যোজন-যোজন ফারাক রয়েছে। কাজেই আমরা তাদের সঙ্গে ঐক্যের কথা ভাবছি না। তবে বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, তারা বামদলগুলো শুধু সরকার বিরোধী ইস্যুতে একটি যুগপৎ আন্দোলনে বিশ্বাসী কিন্তু শর্ত হলো জামায়াতের সঙ্গে বিএনপিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক ত্যাগ করতে হবে।
এছাড়াও যে রাজনৈতিক দলগুলো ক্রিয়াশীল তারেক জিয়ার ব্যাপারে তাদের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব রয়েছে। কিছু কিছু রাজনৈতিক দল মনে করে যে, তারেক বিএনপির নেতৃত্বে থাকলে বিএনপির সঙ্গে জোট করা সম্ভব নয়। আর সর্বশেষ যে বিএনপির যে আদর্শিক ইস্যু সেই আদর্শিক ইস্যু বৃহত্তর জোট গঠনের ক্ষেত্রে এখন বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনীতি এখন একমাত্র বিএনপি এবং জামায়াত ছাড়া সকল রাজনৈতিক দলই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকার করেন। তারা সকলেই আগস্টের হৃদয়বিদারক ঘটনাকে ইতিহাসের জঘন্যতম ঘটনা মনে করেন। কিন্তু এই সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে বিএনপির অবস্থান দোদুল্যমান, অস্পষ্ট এবং বিতর্কিত। আর সে কারণেই নতুন জোটের সন্ধান করলেও শেষ পর্যন্ত বিএনপি জোট গঠন করতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
বাংলা ইনসাইডার