আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠার ৭২ বছর পার করলো। আওয়ামী লীগ একটি সুসময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। টানা ১২ বছরের বেশি সময় ধরে দলটি দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে এবং এক রকম রাজনৈতিক প্রতিপক্ষহীন।
কিন্তু এরকম সুখী সময় আওয়ামী লীগের সবসময় ছিল না। আওয়ামী লীগ অনেক কঠিন এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পার হয়ে আজকের জায়গায় এসেছে।
বিশেষ করে স্বাধীনতার পর পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট থেকে আওয়ামী লীগকে এক অস্তিত্বের পরীক্ষা দিতে হয়েছে এবং সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আজকে আওয়ামী লীগ এই জায়গায় এসেছে।
আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে দুঃসময় পার করে এসেছে। সেই দুঃসময়ে যারা আওয়ামী লীগের কান্ডারী ছিলেন তাদের কয়েকজনকে নিয়ে এই প্রতিবেদন।
জোহরা তাজউদ্দীন: পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের পর আওয়ামী লীগ একরকম বিলুপ্তই হয়ে গিয়েছিল। নেতাকর্মীরা সব জেলে। কিছু বিশ্বাসঘাতক খুনি মোশতাকের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। আর জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল একটাই যে, আওয়ামী লীগের শেকড় উপড়ে ফেলা। কিন্তু আওয়ামী লীগের শেকড় এত গভীরে প্রোথিত যে তার শেকড় উপড়ে ফেলা যায় না। এই সংকটময় সময়ে জোহরা তাজউদ্দীন আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠিত করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। এই দুঃসময়ে তিনি আওয়ামী লীগের নিভু নিভু প্রদীপকে নিভতে দেননি।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী: পঁচাত্তর পরবর্তী আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে কান্ডারী হয়ে এসেছিলেন জাতীয় সংসদের বর্তমান উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং আওয়ামী লীগ সভাপতিকে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আর সে কারণেই আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সবসময় শ্রদ্ধাচিত্তে এখনো স্মরণ করেন।
জিল্লুর রহমান: জিল্লুর রহমানের ভূমিকা পঁচাত্তর পরবর্তীতে যেমন কান্ডারীর ছিল তেমনি ওয়ান-ইলেভেনের সময়ও ছিল। বিভিন্ন সংকটে বিশ্বস্ততা এবং আদর্শের প্রতি অবিচল থাকার যে উদাহরণ জিল্লুর রহমান দেখিয়েছিলেন তা শুধু আওয়ামী লীগের রাজনীতির নয় সারা দেশের রাজনীতির জন্য একটি অনুকরণীয় উদাহরণ।
মোহাম্মদ নাসিম: পঁচাত্তর পরবর্তী আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যারা আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। বিশেষ করে ৯১ নির্বাচনে বিরোধী দলের চিফ হুইপ থাকা অবস্থায় এবং নির্বাচনের পর সরকারে তিনি অন্যতম ক্রিয়াশীল ব্যক্তি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নব জাগরণে তিনি শেখ হাসিনার একজন বিশ্বস্ত সৈনিক হিসেবে কাজ করেছেন।
মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান: পঁচাত্তর পরবর্তী আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান। তিনি ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং আওয়ামী লীগকে মূল ধারার রাজনীতিতে ফিরে আনার ক্ষেত্রে একজন কান্ডারী হিসেবে চিহ্নিত।
ওবায়দুল কাদের: ওবায়দুল কাদের পঁচাত্তর পরবর্তীতে ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। জেল-জুলুম হুলিয়া মাথায় নিয়ে ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগকে রীতিমতো পুনর্জন্ম দিয়েছিলেন।
বেগম মতিয়া চৌধুরী: বেগম মতিয়া চৌধুরী ওয়ান-ইলেভেনের সময় পাদপ্রদীপে আসেন। সততা, নিষ্ঠা, বিশ্বস্ততা এবং নেত্রীর প্রতি একান্ত আনুগত্যের কারণে তিনি আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের একজন কান্ডারী হিসেবে বিবেচিত হবে।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম: সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও ওয়ান-ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন। জিল্লুর রহমানের সঙ্গে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করা এবং আওয়ামী লীগের ভাঙ্গন ঠেকানোর ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন: প্রয়াত অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ওয়ান-ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। বিশেষ করে শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্বস্ততা, দলের ঐক্য এবং শেখ হাসিনার মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন।
এছাড়াও আওয়ামী লীগের তৃণমূল এবং আরও অনেক নেতা আছেন তারা দুঃসময়ের জ্বলে উঠেছেন এবং আওয়ামী লীগকে আজকের অবস্থানে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে যাদের কিছু না কিছু হলেও অবদান রয়েছে।
বাংলা ইনসাইডার