জামালপুর প্রতিনিধি: দেখতে দেখতে ২০ টি বছর পার হয়ে গেলেও কাজ শেষ হয়নি টাকুরিয়া এলাকার গ্রামীণ সেতুটির। ৬ টি গ্রামের প্রায় ৮ হাজার মানুষের নিত্যদিনের চলাচলে গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। ব্রিজটির এই বেহালদশা দীর্ঘ ২০ বছরেও লাগব না হওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের টাকুরিয়া গ্রামের হালিম মেম্বারের বাড়ির পার্শ্বে জিয়া খালের উপর এই অসমাপ্ত সেতুটির অবস্থান।
বিন্নাফৈর, মালিপাড়া, ব্রাম্মণজানি, টাকুরিয়া, গাছ বয়ড়া, বয়ড়া ও চর সরিষাবাড়ী এলাকার মানুষের যাতায়াতের পথ এটি।
এই সড়কটি স্থানীয়দের কাছে সরিষাবাড়ী শহরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা। কিন্তু দীর্ঘদিনেও ব্রিজটির সম্পুর্ণ কাজ শেষ না হওয়ায় যাতায়াতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের মানুষ অসম্পন্ন সেতুর নিচ দিয়ে নিত্য যাতায়াত করছেন। শুধু তাই নয়, এক মোটরসাইকেল আরোহীকে তার সহযাত্রীসমেত সেতুর ওপর স্পেন না থাকায় নিচ দিয়ে চলে যেতে দেখা গেছে।
পোগলদিঘা ইউনিয়নের টাকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, মালিপাড়া, টাকুরিয়া, ব্রাম্মণজানি, গাছ বয়ড়া, বয়ড়া ও চর সরিষাবাড়ী এলাকার মানুষের চলাচলের জন্যে ২০০১ সালে সরকারি অর্থায়নে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।
নির্মাণ কাজ শুরু করার পর পিলারের কাজ শেষ হলেও অদ্যবধি স্পেন বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়নি। স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ কাজ শেষ না করেই ঠিকাদার বিল তুলে নিয়ে লাপাত্তা দিয়েছেন। এতে করে এলাকার প্রায় ৮ হাজার মানুষ রয়েছে চরম ভোগান্তিতে।
মালিপাড়া এলাকার বাসিন্দা ওয়াছিম উদ্দিন বলেন, খুব সম্ভব ২০০১ সালে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু পিলারের কাজ শেষ হওয়ার পরেও দীর্ঘ ২০ বছরেও হয়নি স্পেন বসানোর কাজ।
তারপর বিভিন্ন সময় ইউনিয়নের মেম্বার, চেয়ারম্যানকে স্পেন বসানোর ব্যবস্হা করে দেওয়ার কথা জানালেও আশা দিয়ে কেউ এটি ঠিক করে দেননি। ফলে অকেজো অবস্থায় পরে রয়েছে ব্রিজটি।
একই এলাকার বাসিন্দা মুসলিম মিয়া বলেন, এই ব্রিজটির কাজ আজও শেষ হয়নি। বর্ষা ও বন্যার সময় এলে আমরা পানির জন্যে ঘরের বাইরে যেতে পারি না।
স্থানীয় এলাকাবাসী আজাহার আলী বলেন, এই সেতুটি পরিপূর্ণভাবে তৈরি না হওয়ার ফলে প্রায় ৮ হাজার মানুষ সরিষাবাড়ী পৌর শহরে যাতায়াতে প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
এটি মেরামত করার জন্যে মেম্বার, চেয়ারম্যানের কাছে অনেকবার গিয়েছি, কোনো কাজ হয়নি। এই রাস্তা পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন আমাদেরকে সরিষাবাড়ী থানা সদরে যেতে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এলাকাবাসী বলেন, জিয়া খালের উপর এই ব্রিজটি না হওয়ার আরো একটি কারণ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। বিএনপির শাসনামলে বিএনপি সমর্থক দ্বারা কোনো কিছু নির্মিত হলে তা ক্ষমতাসীন কোনো নেতার দ্বারা সহজভাবে মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি আমাদের মধ্যে আজও গড়ে উঠেনি।
তাই এ সেতুটির প্রতি এতোটা অবহেলা। তারা যদি নিজ চোখে আমাদের দুর্ভোগ দেখতো তবে সেতুটি নতুনভাবে সংস্কারে কালক্ষেপণ করতো না।
ব্রাম্মণজানি কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী শিহাব উদ্দিন বলেন, এই ব্রিজটি চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় বর্ষাকালে আমরা স্কুল কলেজে যেতে পারি না। আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পানি পেড়িয়ে স্কুল কলেজে যেতে হয়।
পানির কারণে আমরা স্কুল কলেজে সময় মতো যেতে পারি না। সরকার এতো টাকা ব্যয় করে জনদূর্ভোগ লাগবে ২০ বছর আগে এই ব্রিজটির কাজ শুরু করলেও অসম্পন্ন থাকায় চার এলাকার মানুষের কোন উপকারেই আসেনি।
জরাজীর্ণ অবস্থাতেই ব্রিজটি পড়ে রইলো। আমরা এই এলাকার বসবাসকারীরা ব্রিজটির স্পেন বসানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই সেতুটি সম্পর্কে আমি জেনেছি। সরেজমিনে পরিদর্শন করে জনগুরুত্ব বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।