তোমাকে ভালোবাসার পর বুঝেছি
– আসিফ ইকবাল আরিফ
তোমাকে ভালোবাসার পর বুঝেছি
কতো সংকীর্ণতার মেঘে ডুবে মরতে পারি আমি।
শুধু তোমাকে ভালোবাসার পরই বুঝেছি
কতো অল্পতে ভর করে রচিত হয় সহস্র রাতের মহাকাব্য।
তোমার চোখে চেয়ে বুঝেছি কতো শত বিশালতায়
সাজানো এই মরু-ছায়া-শীতল তল – যার গভীরতা
হয়তো আছে কিন্তু আমার সাধ্য নেই সেখানে পৌছাবার।
শুধু তোমাকে ভালোবাসার পরই আমার ভেতরে
চেপে থাকা এক প্রেমিক ব্জ্রপাতের হুংকারে
কেঁপে উঠে আমাকে দুমড়েমুচড়ে ফেলেছিলো।
জেগে উঠেছিলো সে ভেতরের অনুর্বর মরু ফেঁড়ে।
তোমাকে ভালোবাসার পরে আমার নার্ভের
শিরা-উপশিরারা প্রেম টর্ণেডোতে কেঁপে উঠেছিলো।
তোমাকে ভালোবাসার পর আমার ভেতরের কথাগুলো
যেনো প্রেম কাব্যের এক টারবাইনে পরিণত হয়েছিলো।
আমার ধমনীর প্রতিটি গলির সব রক্তকণিকা
সেই টারবাইনে ঘুরপাক খেয়ে শুধু তুমি তুমি করতো।
আমার চোখ জুড়ে ছিলো তোমার মুখয়ব – এ যেনো
লর্ডসের গ্যালারীর থেকেও বেশি সাজানো গোছানো।
তোমার কপালের ভাঁজ, চোখের নীল, গ্রীবার কালো তিল
থুতনির কেটে যাওয়া দাগ আর তোমার বারুদের ঠোঁট –
এগুলো সব হয়ে উঠেছিলো যেনো একেকটি গ্যালারি।
যার সৌন্দর্য্য পৃথিবীর কেউ দেখেনি, কারোর চোখে পড়েনি।
আমার নাসিক্য জুড়ে ছিলো তোমার ভেজা চুলের
কাঁচা পানির নির্জল গন্ধ, শরীরের নির্মল শোভা
আর তোমার ঠোঁটে কোটি রাতের জমা কস্তুরীর সুবাস।
আমার কণ্ঠণালী জুড়ে ছিলো শুধুই তৃষ্ণা।
তুমি, তুমি আর শুধু তুমি তুমি করে তোমার অদেখায়
আমার ভেতরটা শুকিয়ে শুকিয়ে মরতো
ঠিক চৈত্রের রোদে শুকানো বাবলা কাঠের মতো করে।
তোমাকে ভালোবাসার পরে আমার আঙুলগুলো
অলসতার ঘুমে মরে যেতে বসেছিলো।
আমি একেবারেই লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম,
অন্যকোনো বস্তু কিংবা অন্যকোনো জন্তু বা দ্রব্যতে
আঙুল ছোঁয়াতে আমি সংকোচের জ্বরে ভুগতাম।
আমার আঙুলগুলো শুধু তোমার চুলের ভাঁজেই
সেসময় আটকে মরতে পাগল হতো খুব করে।
তোমাকে ভালোবাসার পরে বুঝেছিলাম
তুমি যেনো এই প্রান্তের মতোই আদিম শোভায় সুরভিত।
কতো প্রস্ততার চাদরে মোড়ানো তোমার দিনাতিপাত –
ঘুঘুর কণ্ঠের সব মায়া তোমার সুরে, টিয়ার ঠোঁটের যতো লাল;
সব তোমার ঠোঁটে, তোমার শরীর জুড়ে হাজার পাখির নরম পালক।
তোমার বক্ষজুড়ে যেনো বাস সব বুলবুলি ফিঙে আর শালিকের।
ভোরের রোদে বকের পালের সাদা পালকের ঝিলিক ছিলো
যেনো তোমার চাঁদের হাসি জুড়ে, তোমার চঞ্চলাতে; বেলা-অবেলাতে।
তোমাকে ভালোবাসার পরে আমি যেনো চোখের অসুখে ভুগতাম।
আমি অলকানন্দার সব হলুদে দেখতাম তোমার মুখয়ব,
সে ছিলো আমার কাছে শুধুই তুচ্ছ এক ডালের শিশ্ন।
সকালের রোদ দেখলেই মনে হতো তোমার সোনার অঙের ঝলকানি,
রোদের ঝিলিক আমার ভালো লাগতো না,
সূর্যকে আমি চোর
ভাবতাম শুধু,
মনে হতো যেনো রোদেরা তোমার রূপ চুরি করেছে।
টগর, বেলী, আর কাঠগোলাপের সাদা দেখলে মনে হতো –
ওরাও হয়তো তোমার কাছে দেনার দায়ে বন্দী,
তোমার সব স্নিগ্ধতা ওরা ধার করেছে নয়তো বা ওরাও রোদেদের মতো চোর।
তোমাকে ভালোবাসার পর মনে হতো
পৃথিবীর সব সুন্দরে জড়িয়ে আছো শুধুই তুমি।
তোমাকে ভালোবাসার পরে আমি যেনো
চাঁদ আর অমাবশ্যার সাথে একাকার হয়ে গিয়েছিলাম।
তোমার ছুটে চলার শব্দে আমি জ্যোস্নায় ভাসতাম
আবার তুমি থেমে গেলেই আমি রাতের মতো অন্ধকারে মরে যেতাম।
তোমাকে ভালোবাসার পরে নক্ষত্রের রাতের সৌন্দর্য্য বুঝেছিলাম,
বুঝেছিলাম পুঁই ডগার হেলে দুলে বেড়ে ওঠার অন্তিম রহস্য,
বুঝতে পেরেছিলাম ঢোলকলমির ঢুলে ঢুলে বাতাসে দোলার কারণ।
শুধু তোমাকে ভালোবাসার পরে আমি যেনো
আমার ভেতরের এক অন্য আমিকে আবিষ্কার করেছিলাম।
আজ এতোটা বছর হলো! তুমি আমার থেকে দূরে।
নক্ষত্রের রাত এখন মৃত সাগরের মতো মনে হয়।
মনে হয় পৃথিবীর সব ফুল চৈত্রের রোদে শুকিয়ে গেছে।
শালিকের কণ্ঠণালী জুড়ে মহামারী প্লেগ হয়েছে,
বুনোহাঁসের উল্লাস মরে গেছে চিরতরে,
মাছরাঙ্গা শিকারের তীব্রতা হারিয়েছে এই দিগন্তে,
চড়ুই আর বাবুই পাখি বাসা বানাতে ভুলে গেছে।
ফিরে এসো নীহারিকা, এমনও নির্জনতার রাতে।
প্রেমের গানে দিগন্ত মাতাও, সুর তুলে দাও ফুলে ফুলে।
ফিরে এসো নীহারিকা! এই মৃত নক্ষত্রের রাতে!
ভালোবাসা দাও, প্রেম দাও, নক্ষত্র যায় যে মরে!
আসিফ ইকবাল আরিফ
সহকারী অধ্যাপক
নৃ-বিজ্ঞান বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
ত্রিশাল, মযমনসিংহ-২২২৪.