গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক প্রায় ফাঁকা। বিভিন্ন স্টপেজে ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে।
কোথাও কোথাও পিকআপ ভ্যানে যাত্রী বহন ও পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, পিকআপ চলছে। তবে নানা অজুহাতে ঘর থেকে বের হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
এদিকে কাঁচা বাজারগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। যারা ঘর থেকে বের হচ্ছেন তাদের অনেকের মুখে মাস্ক রয়েছে। আবার অনেকের মুখে মাস্ক থাকলেও থুতনির নিচে মাস্ক রেখে চলাচল করছেন। শুক্রবার (২৩ জুলাই) লকডাউনের প্রথম দিনে সড়ক-মহাসড়কে এমন চিত্র দেখা গেছে।
টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ থেকে অটোরিকশায় ভেঙে ভেঙে গাজীপুর অতিক্রম করে ঢাকার উদ্দেশ্যে আসছেন যাত্রীরা। সড়ক-মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
গাজীপুর সদর উপজেলার শিরিরচালা এলাকায় ভবন নির্মাণের কাজ করেন রুবেল ও শামীম। তাদের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার লেঙ্গুদাসপাড়া গ্রামে। তারা জানান, শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। বেলা সাড়ে ১২টায় গাজীপুর সদর উপজেলার শিরিরচালা পৌঁছান। অটোরিকশা, ভ্যান, সিএনজি পরিবর্তন করে দুই জনে দুই হাজার টাকার বেশি ভাড়ায় এ পর্যন্ত পৌঁছেছেন। ভবন নির্মাণের চুক্তিবদ্ধ কাজ থাকায় জীবিকার তাগিদে তাদেরকে বাড়ি থেকে বের হতে হয়েছে।
ফাহিমা বেগম ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ী থেকে বৃহস্পতিবার শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার এলাকায় ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন। মানুষের মুখে শুনেছেন, আগামী রবিবার থেকে লকডাউন। তাই শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে গাজীপুর চৌরাস্তা বোনের বাড়িতে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে ১০ কিলোমিটার পথ অটো ও সিএনজি দিয়ে অতিক্রম করেন। মাওনা চৌরাস্তা এসে জানতে পারেন, আজ থেকেই লকডাউন।
শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় অটোচালক জাহিদুল ইসলাম জানান, ঘরে খাবার নেই। ঈদের আগেও লকডাউন ছিল। তখন গাড়ি নিয়ে বের হননি। ঈদের পরেও কঠোর লকডাউন দিয়েছে সরকার। ঘরের বাইরে বের হওয়ার নিষেধ থাকলেও পেটের দায়ে বের হতে হয়েছে। আজকেই সড়কে থাকবে। এতে যা আয় হয় তা দিয়ে কয়েক দিন পরিবার নিয়ে কোনোমতে চলবেন।
জয়দেবপুর চৌরাস্তায় ব্যাগ, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেনন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ধারা বাজার এলাকার জৈনুদ্দিন শেখ। চাকরি করেন ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে। তিনি বলেন, আগামীকাল অফিস খোলা থাকার কথা রয়েছে। লকডাউন থাকায় ভোরে বাড়ি থেকে রওনা করে তিন গুণ ভাড়া দিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি। এখন ঢাকা যাওয়ার জন্য হাতে সে পরিমাণ টাকাও নেই, সড়কে গাড়িও পাচ্ছি না। যেসব বাহন ঢাকা যেতে চাচ্ছে, তারা তিন-চার গুণ ভাড়া চাচ্ছে।
সকালে সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন রয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। কিছু বাস হাইওয়েতে চলাচল করতে দেখা গেছে, তবে সেগুলো দূরপাল্লার। তারা যাত্রী নামিয়ে খালি গাড়ি নিয়ে গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সরকারি বিধিনিষেধ কার্যকর করতে সকল বিভাগের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে রয়েছে। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, লকডাউন কার্যকর করতে জেলাজুড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ১০টির বেশি টিম কাজ করছে।
বাংলা ট্রিবিউন