উড়াল এবং পাতাল অংশের সমন্বয়ে ঢাকায় বর্তমানে নির্মাণাধীন ১২৮ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ছয় লাইনের মেট্রো র্যাপিড ট্রানজিটের (এমআরটি) নতুন সংযোজন হবে এই প্রকল্প। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছে ২০৩০ সাল পর্যন্ত।
আগামী ৫০ বছরে রাজধানীর যানজট নিরসনে ২৫৮ কিলোমিটারের দ্বিতীয় ভূগর্ভস্থ মেট্রো সংযোগ স্থাপনের প্রস্তাবনা উন্মোচন করেছে বাংলাদেশ সরকার।
প্রকল্পের সম্ভাব্যতা জরিপের খসড়া নির্মাণ করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। প্রস্তাবিত খসড়ায় ঢাকা এবং এর আশেপাশে মোট ১১টি রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা থাকছে।
৫০ বছর মেয়াদী এই পরিকল্পনা তিন ধাপে বাস্তবায়িত হবে। প্রথম পর্যায়ে মোট ১০২ কিলোমিটার জুড়ে চারটি রাস্তা নির্মাণ করা হবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে যথাক্রমে ৮৫ কিলোমিটার এবং ৭১ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা নির্মিত হবে।
২০১৮ সালে সম্ভাব্যতা জরিপের কাজ শুরু করে বিবিএ। স্পেনভিত্তিক সহযোগী সংস্থা টিপসা জরিপটি পরিচালনা করে। শুরুতে প্রতিষ্ঠানটি ৯০ কিলোমিটার সংযোগের প্রাথমিক নকশা ও সম্ভাব্যতা যাচাই করে। পরবর্তীতে, সম্ভাব্যতা পরিকল্পনা বৃদ্ধি করে ২৩৮ কিলোমিটার জুড়ে পরিচালনা করা হয়।
খসড়া সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনটি ১৫ মার্চ দাখিল করা হয়। ১১টি রুটসহ ২৫৮ কিলোমিটার পাতাল সংযোগ নির্মাণের প্রস্তাবনা রাখে টিপসা।
উড়াল এবং পাতাল অংশের সমন্বয়ে ঢাকায় বর্তমানে নির্মাণাধীন ১২৮ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ছয় লাইনের মেট্রো র্যাপিড ট্রানজিটের (এমআরটি) নতুন সংযোজন হবে এই প্রকল্প। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছে ২০৩০ সাল পর্যন্ত।
সম্ভাব্যতা খসড়া জরিপ অনুযায়ী, দ্বিতীয় মেট্রোরেল সংযোগের লাইন মাটি থেকে ৩০ মিটার গভীরে স্থাপিত হবে। টানেল বোরিং মেশি্নের (টিবিএম) মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গপথ নির্মাণ করা হবে। স্টেশন নির্মাণে ‘কাট অ্যান্ড কভার’ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।
২৯.৩৫ কিলোমিটারের প্রথম রুটটি উত্তরে টঙ্গী থেকে দক্ষিণে কেরাণীগঞ্জের ঝিলমিল প্রজেক্ট পর্যন্ত যাবে। রুটটি নির্মাণে প্রায় ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ হবে।
প্রথম পর্যায়ের অপর তিনটি রুটের মধ্যে আছে- গাবতলী থেকে বেলাবো পর্যন্ত ২০.১৮ কিলোমিটার, কেরাণীগঞ্জ থেকে সোনাপুর পর্যন্ত ১৯.৩১ কিলোমিটার এবং জাহাঙ্গীরনগর উত্তরা সেক্টর-১৩ থেকে বসুন্ধরা দক্ষিণ ও ফতুল্লা স্টেশন হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ৩৪.৯৮ কিলোমিটার রাস্তা।
দীর্ঘদিনের আলোচনা সত্ত্বেও ২০১৫ সালে অনুমোদনপ্রাপ্ত ঢাকার কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (আরএসটিপি) সংশোধনীতে পাতাল সংযোগ নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত হয়নি। সম্ভাব্যতা জরিপ অনুসারে, এই সংযোগটি নির্মাণে এমআরটি প্রকল্পের পাতাল সংযোগের চেয়ে বেশি খরচ পড়বে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রকল্পটি শেষ হলে, ঢাকার ৮০ লাখ কর্মজীবী মানুষের অর্ধেক তা ব্যবহার করবে। ফলে নগড় জুড়ে যানজট নিরসন হবে।
বিবিএ নির্বাহী পরিচালক বেলায়েত হোসেইন জানান, জরিপটির ৬৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। অক্টোবর নাগাদ পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। এছাড়া, একাধিক সংস্থা প্রকল্পটিতে বিনিয়োগের আগ্রহ জানিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তবে, এমআরটি লাইন-৬ এর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (সিভিল) আব্দুল বাকি মিয়া জানান, প্রস্তাবিত লাইনের অনেকগুলোই এমআরটিলাইনের সমান্তরাল। তিনি আরও জানান, জনবহুল নগরীতে কীভাবে সুরঙ্গ এবং স্টেশন নির্মাণের স্থান খুঁজে পাওয়া যাবে প্রতিবেদনটিতে তার উল্লেখ নেই। পাশাপাশি, প্রকল্পটি কার্যকর করতে আর্থিক সমাধানের কোনো বিষয় সেখানে থাকছে না।
- সূত্র: ইন্টারন্যাশনাল রেলওয়ে জার্নাল