আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগের সব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোকে পুনর্গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
যদি এই সময়ের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো পুনর্গঠিত না হয় তাহলে কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা অনুযায়ী ইতিমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ মহানগর এ নির্দেশনা কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে।
আওয়ামী লীগের অন্তত দু`জন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন, সারাদেশে এটি কার্যকর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে করোনা পরিস্থিতির যদি অবনতি হয় তাহলে হয়তো সাময়িকভাবে কিছুদিনের জন্য এই কার্যক্রম পেছানো হবে। তবে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যেন সবগুলো স্থানীয় পর্যায়ের কমিটি পুনর্গঠিত হয় সেটির ব্যাপারে জোর চেষ্টা চলছে।
আওয়ামী লীগের অধিকাংশ স্থানীয় পর্যায়ের কমিটিগুলোর এখন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি হওয়ার কারণে দলের অনুপ্রবেশকারীরা শক্তিশালী অবস্থানে গ্রহণ করেছেন।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি হওয়ার কারণে দলের এমপিরা তাদের পছন্দের মত লোকজনকে দিয়ে দল পরিচালনা করছেন। আর এই কারণেই মেয়াদোত্তীর্ণ এবং অকার্যকর কমিটিগুলোকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, আওয়ামী লীগ করোনা পরিস্থিতির একটু উন্নতি হলে আগামী নির্বাচন নিয়ে কার্যক্রম শুরু করতে চায়। নির্বাচন কার্যক্রমকে আওয়ামী লীগ পাঁচ ভাগে বিভক্ত করেছে।
প্রথমত, সংগঠনকে ঠিক করা। সংগঠনকে ঠিক করতে গিয়ে স্থানীয় পর্যায়ের সম্মেলন গুলো ধাপে ধাপে সম্পন্ন করা। দলে অনুপ্রবেশকারী এবং দুর্বৃত্তদেরকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং তাদেরকে আওয়ামী লীগ থেকে বের করা।
দ্বিতীয়ত, সারাদেশের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম জোরদার করা এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর নতুন করে সম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
তৃতীয়ত, সারাদেশে এমপিদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করা। যে সমস্ত এমপিরা নির্বাচিত হবার পর এলাকায় সঠিকভাবে কাজ করছেন না তাদেরকে চিহ্নিত করা।
যারা দলের স্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন যে, উপজেলা নির্বাচন এবং পৌরসভা নির্বাচনে যারা যারা বিরোধিতা করেছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম খুব শীঘ্রই শুরু হবে।
চতুর্থত, জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত করা। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাই মনে করছেন যে, করোনা পরিস্থিতি সামাল দিলে আওয়ামী লীগ আগামী বছরের কোন একটা সময়ে কাউন্সিল অধিবেশন করবে এবং এই কাউন্সিল অধিবেশনকে ঘিরেই আওয়ামী লীগ তাদের স্থানীয় পর্যায়ের কমিটিগুলোকে পুনর্গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে।
পঞ্চমত, সারাদেশে মাঠ জরিপ সম্পন্ন করা। আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদের অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেছে। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ সারাদেশে তাদের জনপ্রিয়তার অবস্থা কি, কোন প্রার্থীর কি হাল ইত্যাদি নিয়ে একটি মাঠ জরিপ করতে চায়।
এই মাঠ জরিপ করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ আগেও দ্বিতীয় বছর থেকে একাধিকবার মাঠ জরিপ করেছে এবং আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা, কোন প্রার্থীর কি অবস্থা ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করেছে। এই মাঠ জরিপ মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন যে, ৩০ সেপ্টেম্বরের পর থেকে আওয়ামী লীগ একটি সাংগঠনিক উৎসবের মধ্য দিয়ে যাবে। এই সময়ে পুরো দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে।
তবে নেতারা এটাও শঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, এই সবকিছুর আশাবাদ সম্ভাবনা নির্ভর করছে দেশে বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতি উন্নতির ওপর।
বাংলা ইনসাইডার