রুবায়েত ফয়সাল আল-মাসুম এর ছোটগল্প: মোল্লা বউয়ের হিল্লা বিয়ে
৩য় ও শেষ পর্ব
গ্রামের মানুষের মধ্যে কানাঘুঁষা চলছে মোল্লা বউয়ের হিল্লা বিয়ে নিয়ে। এই ছোট ছেলের সাথে নাসিমা বেগমের আবার কবুল বলতে হবে এই বিষয় টা গ্রামে এখন টপ অফ দা ডিসকাশন। এইদিকে লেবুমোল্লার প্রতিষ্ঠিত গ্রামের নতুন মাদ্রাসায় প্রতি বছর ইসলামি সম্মেলন হয়ে থাকে। এ বছরও হবে, দিন ঘনিয়ে আসছে, সকলেই এ সম্মেলন কে কেন্দ্র করে ব্যস্ত । এ সময় লেবু মোল্লা নিজেই সম্মেলনের কাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এ বছর লেবু মোল্লা সম্মেলন আয়োজনের ধারে কাছেই নাই। সামাজিক কর্মকান্ডে লেবুমোল্লাকে সবসময় সকলের আগে পাওয়া যেতো। বৃদ্ধ বয়সে এ ধরনের একটা ঘটনার মুখোমুখি হয়ে লেবুমোল্লা এখন লোকচক্ষুর আড়াল হয়ে গেছেন।
তাই শহরের বড় মৌলবী একদিন লেবুমোল্লার খোঁজ নেয়ার জন্য বাড়িতে আসলেন। নাস্তা পানি খেয়ে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস শেষে মৌলবী সাহেব লেবু মোল্লার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিবরণ শুনতে চাইলেন। এক ঘটনা বারংবার বলতে বলতে লেবুমোল্লা বিরক্ত হয়ে গেছেন। তাই আর বলতে ইচ্ছুক না, তাই লেবুমোল্লা ব্যপারখানা এড়িয়ে যেতে চাইলেন। তবুও মৌলবি সাহেব শুনবেন, মৌলবী সাহেবের অনুরোধে অনিচ্ছা সত্ত্বেও লেবুমোল্লা সেদিনের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিলেন। বিবরণ শুনে মৌলবী সাহেব অত্যন্ত ব্যথিত হলেন। কারণ বর্তমানে এ ধরনের হিল্লে বিয়ের মতো কুসংস্কার সমাজে আছে এটা তিনি ভাবতে পারছেন না। তালাক বিষয়ে মানুষের ভুল ধারনা বিদ্যমান। এ জন্য গ্রামের ইমামদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রয়োজন আছে। তাছাড়া প্রথম তালাকের পর স্ত্রীর তিন পিরিয়ড সময়ের মধ্যে স্বামী আর স্ত্রী পরস্পরের ভুল বুঝতে পারে তবে তারা পুনরায় একসাথে থাকতে পারবে। আর এ বিষয়টি কে আমরা সমাজে কত কঠিন করেছি।
ঘটনার বিবরণ শুনে মৌলবী সাহেব বিষয়টি স্পষ্ট করে বললেন আপনার স্ত্রী তো তালাক হয় নি। আমি সকলকে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিবো। লেবুমোল্লা বসা থেকে লাফ দিয়ে দাড়িয়ে গেলেন। হুজুর বলেন কি? তাহলে মসজিদের ইমাম সাহেব আমাকে কি ফতোয়া দিসে। লেবুমোল্লা গ্রামের ইমাম সাহেব আর মেম্বারসহ কযেকজনকে একত্রিত করলেন। মৌলবী সাহেব সকলকে উদ্দেশ্য করে তালাক কখন হয় না হয় সে বিষয়ে আলোচনা করলেন। লেবুমোল্লার বিষয়ে বললেন আপনাদের রাগারাগি আর মারামারির পর্যায়ে যখন লেবুমোল্লা ভাবিকে বললেন “দুজনের মধ্যে যদি তুই আগে কথা বলিস তবে তুই তালাক”। সেক্ষেত্রে লেবুমোল্লা সাহেব আগে কথা বলেই দিয়েছেন, শর্ত তো শুরুতেই ভেঙ্গে গেছে। পরে যদি ভাবি মোল্লা সাহেবের সাথে কথা বলে তবে তো তালাক হবে না। কি সুন্দর যুক্তি দিয়ে মৌলবী সাহেব বুঝিয়ে দিলেন। গ্রামের মানুষের দৃষ্টি খুলে গেলো।
এই সংবাদ শুনে লেবুমোল্লা অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে দ্রুত ঘরের বড় খাশি জবাই দিলেন। সেই সাথে বাড়ির আসেপাশের কয়েকজন মানুষ দাওয়াত দিলেন। দুপুরের জন্য জমপেশ খাওয়ার আয়োজন চলছে। হঠাৎ করেই বড়বউ সেতারা বেগমের চিৎকার “তোমরা কে কোথায় আছো ছোট বিষ খাইছে গো ছোট বিষ খাইছে। চিৎকার শুনে লেবুমোল্লাসহ বাড়ির সকলে তাড়াতাড়ি বের হলেন। নাসিমা বেগম নিজের উপর এত দকল সহ্য করতে পারলেন না। অল্প বয়সের একটা মেয়ে এত চাপ নেয়া আর সমাজের মানুষের ঘৃনা-অপবাদ সহ্য করতে পারে নাই। নাসিমা বেগমের মুখদিয়ে লালা পরছে। লেবুমোল্লা এ দৃশ্য দেখে বারংবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। বাড়ির সবাই ধরাধরি করে নাসিমা বেগমকে হাসপাতালে নিয়ে গেসেন।
লেখক:
প্রকৌশলী রুবায়েত ফয়সাল আল-মাসুম
সহকারী প্রকৌশলী
বিএডিসি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ক্ষুদ্রসেচ জোন,
ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
ই-মেইল: rfamasum@gmail.com