রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অফিসার্স কোয়ার্টার একটি সংরক্ষিত এলাকা। যে কেউ যেনতেনভাবে সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। সেখানে সিসিটিভি রয়েছে।
এই সিসিটিভি ফুটেজ কিভাবে গণমাধ্যমের কাছে চলে গেল তা এক রহস্য। সাকলায়েন পরীমনির প্রেম উপাখ্যান অন্য প্রসঙ্গ। পুলিশ কমিশনার নিজেই বলেছেন যে, একজন বিসিএস কর্মকর্তা হিসেবে সাকলায়েন যেটা করেছে তা নৈতিকতা বিবর্জিত কাজ। চাকরি বিধি এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শৃঙ্খলা বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কিন্তু প্রশ্ন অন্য জায়গায়। একটি সরকারি আবাসন থেকে সিসিটিভি ফুটেজ কারা গণমাধ্যমে ছেড়ে দিলো? যারা গণমাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছে তারা কি ভালো কাজ করেছে? সেটি কি কোন অপরাধ নয়? এর ফলে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা কি হুমকির মুখে পড়েনি?
শুধু এই সিসিটিভি ফুটেজ নয়। আমরা লক্ষ্য করলাম পরীমনির সঙ্গে সাকলায়েনের একটি কেক কাটার ভিডিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছাড়া হয়েছে। বিএনপি জামায়াত নিয়ন্ত্রিত যে কয়েকজন সাংবাদিক বিদেশে থেকে অপপ্রচার, কুৎসা এবং মিথ্যাচার করছেন তাদের অন্যতম ইলিয়াস হোসেন। সেই ইলিয়াস হোসেন এটি প্রথম ইউটিউবে ছেড়েছেন।
আবারও সেই একই প্রশ্ন যে, এই ভিডিও ফুটেজটি ইলিয়াস হোসেনের কাছে গেল কিভাবে। অনুসন্ধান করে দেখা গেছে যে, পরীমনির বাসায় যখন অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল তখন তার এবং ওই বাসায় অবস্থানরতদের ক্যামেরাগুলো জব্দ করা হয়েছিল। বিভিন্ন সূত্র বলছে, সে ক্যামেরাতেই পরীমনির সঙ্গে সাকলায়েনের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবিটি ছিলো।
এরকম একটি ছবি এই মামলার একটি দলিল হতে পারে কিংবা কর্মকর্তা কর্মচারী শৃঙ্খলা বিধি অনুযায়ী সাকলায়েনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রেও একটি বড় আলামত হতে পারে। এরকম আলামত কিভাবে ফাঁস হয়ে গেল এবং বাইরে চলে গেল।
শুধু তাই নয় আমরা লক্ষ্য করলাম যে, পরীমনি, পিয়াসা মৌ এর অনেক ভিডিও ফুটেজ বিচারের আগেই প্রকাশ্যে আসছে, গণমাধ্যমে হাতে হাতে ঘুরছে। শুধু গণমাধ্যম নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকের প্রচার করছে।
একজন সন্দেহভাজন অভিযুক্তকে যখন গ্রেপ্তার করা হবে এবং তার কাছ থেকে যে সমস্ত আলামত জব্দ করা হবে সেটি মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য, তথ্য-উপাত্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। এই সাক্ষ্য, উপাত্তগুলো একমাত্র আদালতের কাছে ন্যস্ত করার কথা, এটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার কথা না।
প্রশ্ন উঠেছে যে, এই ধরনের গোপন ভিডিও গুলো কিভাবে বাইরে চলে যাচ্ছে, কারা বাইরে পাঠাচ্ছে। এটি যদি এভাবে বাইরে চলে যেতে পারে তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত, গোপন নথি কি বেরিয়ে যাচ্ছে?
কিছুদিন আগে একজন সংবাদকর্মীকে হেনস্তা করা হলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো তিনি রাষ্ট্রের গোপন তথ্য ও ছবি তুলেছেন এবং এজন্য তার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা হলো। পরীমনি, পিয়াসা মৌ যদি কোন অন্যায় করে তাহলে নিশ্চয়ই তার সেই অপরাধের বিচার হবে এবং সেটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা করছে।
কিন্তু এই অপরাধের বিচারের আগেই যারা এই সমস্ত গোপন ভিডিও এবং উপাত্তগুলো পাচার করে দিচ্ছেন তারা কি কোন অপরাধ করছেন কিনা সে প্রশ্ন উঠেছে।
যারা এই কাজটা করছেন তারা সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে ফেলার জন্য এটা করছেন কিনা সেই প্রশ্নও উঠেছে। যেকোনো গোপন তথ্য এভাবে যদি পাচার হয়ে যায় তাহলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তাই হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।