বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি নেই দুই বছরের বেশি হলো। আগামী জুলাইয়ে সম্মেলনেরও দুই বছর পূর্ণ হতে চলেছে। তবুও অবিভাবকহীন জবি ছাত্রলীগ।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অন্যতম বড় ইউনিট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। তবুও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অন্যতম প্রধান এই ইউনিটে কমিটি দিতে ব্যর্থ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
দীর্ঘ এই দুই বছর জবি ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে ছিল নানা গুঞ্জন। বিভিন্ন সময়ে নেতাকর্মীদেরকে শীঘ্রই কমিটি দেয়া হবে বলে বিভিন্ন মহল থেকে আশ্বাস দেয়া হলেও সে আশ্বাস আর আলোর মুখ দেখে না। করোনা সহ নানান অজুহাতে কমিটি দেয়া হচ্ছে না।
এতে অবিভাবকহীন জবি ছাত্রলীগ ক্রমশ বিভক্ত হয়ে পড়েছে, দেখা দিয়েছে অন্তর্দ্বন্দ-কোন্দল সহ নানান সমস্যা। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে চেইন অব কমান্ড। কমিটি না থাকায় বেপোরোয়া হয়ে উঠছে অনেক নেতাকর্মী।
দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় অধিকাংশ পদপ্রত্যাশীদের শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে গেছে, শেষ হতে চলেছে সরকারি চাকরি মেয়াদও। ফলে পদপ্রত্যাশী নেতারা না পারছে ছাত্ররাজনীতি ছাড়তে, আবার না পারছে চাকরির পড়াশোনা করতে। তবুও অনেক পদপ্রত্যাশী শীর্ষ দুই পদের আশায় এখানো রাজনীতিতে সক্রিয় আছে।
সম্প্রতি, ১১ এপ্রিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাই প্রমাণ করছে জবি ছাত্রলীগের চেইন অব কমান্ড নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জবি ছাত্রলীগকে শুধুমাত্র প্রটোকলের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদপ্রত্যাশী একজন নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিজেদের প্রটোকল পাওয়ার জন্যই এখনও জবি ছাত্রলীগের কোন কমিটি দেয়া হয়নি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা। দেশের বৃহৎ ছাত্র আন্দোলনের সাক্ষী জবি ছাত্রলীগ। তবুও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে আজ আমরা অবহেলিত।
২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশে বলেন, ছাত্রলীগের যে কমিটিগুলো হয়নি, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সেই কমিটিগুলো পরিপূর্ণ করতে তাগাদা দেন।
২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর তরিকুল ইসলামকে সভাপতি ও শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
তরিকুল-রাসেল কমিটি দেড় বছর অতিবাহিত করলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। এর মাঝে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে কমিটির দুইবার স্থগিতাদেশের পর ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ আবারও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়।
সংঘর্ষের পরেরদিন ১৯ মার্চ তরিকুল-রাসেল কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর ঐ বছর ২০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের মাঠে জবি ছাত্রলীগের দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সেই সম্মেলনের পর ১৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
এতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে আল-নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে লেখক ভট্টাচার্য দায়িত্ব পান। তারপর ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারী ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পান।
তাদের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব নেয়ার নয় মাস পরও দেশের বিভিন্ন শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের ভাগ্য ফেরেনি। অথচ কমিটি বিলুপ্তির পর থেকে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা দিন-রাত প্রোটকল দিয়ে যাচ্ছে।
কমিটিহীন জবি ছাত্রলীগের অনেকেই এখন কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের প্রটোকল দিতে ব্যস্ত। দিনরাত নেতাদের প্রটোকল দিচ্ছে তবুও দেখা মিলছে না কাঙ্ক্ষিত কমিটির।
জবি ছাত্রলীগ কমিটির অনুপস্থতিতে ছাত্রদল সহ অন্যরা সংঘবদ্ধ হচ্ছে বলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী দাবী করছে। তাই অবিভাবকহীন জবি ছাত্রলীগ কোন পথে সেই প্রশ্ন অনেকেরই।
তবে শুধু জবি ছাত্রলীগ শাখাই নয়, দেশজুড়ে ছাত্রলীগের বহু ইউনিটের মধ্যে মাত্র ৫/৭ টি কমিটি দিতে পেরেছে জয়-লেখক কমিটি। তাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ছাত্রলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে।
বাংলা ইনসাইডার