২০১৮ এর নির্বাচনের পর টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। সরকার গঠনের পরই আওয়ামী লীগ ঘটা করে ঘরের ভেতর শুদ্ধি অভিযান শুরু করে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন যে, দুর্নীতি বন্ধ এবং অনিয়ম বন্ধের জন্য শূন্য সহিষ্ণু নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেছেন, এ জন্য অন্য কাউকে লাগবে না, আমিই শুদ্ধি অভিযান করব। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন যে, আমরা আওয়ামী লীগের ভেতর থেকে আগে আবর্জনা পরিষ্কার করবো।
আর এই শুদ্ধি অভিযানে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হন এবং তাদের বিপুল বিত্ত-বৈভবের সন্ধান পাওয়া যায়। স্থানীয় পর্যায়ের নেতা, পাতি নেতাদের শত শত কোটি টাকার সম্পদের হিসাব দেখে মানুষ চমকে ওঠে। শুদ্ধি অভিযানের ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, খালিদসহ একাধিক যুবনেতা, কৃষক নেতা, স্থানীয় পর্যায়ের নেতা গ্রেপ্তার হন।
আর এই শুদ্ধি অভিযানে গ্রেপ্তার না হলেও বেশ কয়েকজন সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক নেতার ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। তারা এখন রাজনীতিতে অপাংক্তেয়। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। তাদের খবরও কেউ নেয় না। কেমন আছেন তারা? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এই প্রতিবেদন।
১. রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন: রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন একজন মেধাবী ছাত্রনেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ছাত্রলীগকে পরিশুদ্ধ করার জন্য দীর্ঘ সময় নিয়ে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের মতো নেতাকে ছাত্রলীগের সভাপতি বানিয়েছিলেন। কিন্তু সভাপতি হিসেবে চাঁদাবাজির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে।
আর এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে সভাপতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এখন রাজনীতিতে থেকেও নেই। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা ছাড়া কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করে না। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তিনি অনুপস্থিত।
২. গোলাম রব্বানী: গোলাম রব্বানীও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের মেধাবী ছাত্র। যাকে আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজে পছন্দ করে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক করেছিলেন। কিন্তু গোলাম রব্বানী কেবল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হননি, দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে তিনি ডাকসুর জিএস হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।
কিন্তু তার বিরুদ্ধে ওঠে চাঁদাবাজির অভিযোগ এবং শোভনের মতো গোলাম রব্বানীকেও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে দুঃখজনকভাবে বিদায় নিতে হয়। এখনও গোলাম রব্বানী বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব থাকার চেষ্টা করছেন। তবে তার রাজনৈতিক গণ্ডি অনেক ছোট হয়ে গেছে।
৩. ওমর ফারুক চৌধুরী: বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন ওমর ফারুক চৌধুরী। যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এ সময় তিনি যুবলীগকে একটি ভিন্ন ধারার সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। বিশেষ করে মেধা-মননের চর্চার জন্য তিনি আলোচিত হয়েছিলেন।
কিন্তু ক্যাসিনো ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় যুবলীগ। আর সেই ঝড়ে আক্রান্ত হন ওমর ফারুক চৌধুরীও। ২০ অক্টোবর ২০১৯ সালে যুবলীগের কাউন্সিলের আগে তাকে দলের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এখন তিনি আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। রাজনীতি সঙ্গে থেকেও তিনি দূরে রয়েছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েই সময় কাটাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
৪. কাওসার মোল্লা: কাওসার মোল্লা ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। ক্যাসিনো ঝড়ে তিনিও তার পদ হারান। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বিভিন্ন মহল তদন্ত করে। কিন্তু তদন্তে তেমন কিছু পাওয়া না গেলেও রাজনীতিতে এখন পর্যন্ত তিনি পুনর্বাসিত হতে পারেননি।
৫. শেখ মারুফ: শেখ মারুফ ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। আর ক্যাসিনো ঝড়েই অনলাইন ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধানের সঙ্গে তার যোগসূত্রতার অভিযোগে তিনি গণভবনের নিষিদ্ধ হন। তারপর তিনি এখন রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। শেখ ফজলুল হক মনির ছোট ভাই হিসেবে রাজনীতিতে তার একটা আলাদা অবস্থান ছিল।
কিন্তু মনি পরিবারের সবাই এখন রাজনীতিতে উজ্জল হলেও শেখ মারুফ এখন নিষ্প্রভ রাজনৈতিক তারকা হিসেবেই নিভৃতে বসবাস করছেন।
বাংলা ইনসাইডার