অর্থনৈতিক বিষয়কে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়ার হাউজিং এলাকায় হামলার শিকারের ২২দিন পর আয়শা সিদ্দিকা ঝড়া (৩০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
রোববার (৪ জুলাই) রাত সাড়ে ১২টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার হৃদরোগ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয় বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নিশ্চিত করেন।
হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত ২১ জুন ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় ৫ জনের নাম উল্লেখসহ এজাহার দাখিল করেন।
এতে হামলায় জড়িত সন্দেহে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখার সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রাশেদ ও ইবি টিএসসিসির কর্মচারী বিপুল আহমেদসহ আরো ৩ জনের নাম উল্লেখ করেন তিনি।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, রাশেদ ঝড়ার নিকট থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। সেখান থেকে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন।
পরবর্তীতে বাকি ১ লক্ষ টাকা পরিশোধের জন্য ঝড়াকে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন সংলগ্ন পুনাক ফুড পার্কে ডেকে নেন। কিন্তু উপস্থিত হওয়ার পর টাকা দিতে অস্বীকার করলে ঝড়া ও তার মা বাড়ি ফেরেন।
বাড়িতে প্রবেশের আগ মূহুর্তে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা কয়েকজন ঝড়ার উপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ভুক্তভোগীর মা লিপি খাতুন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওইদিন সন্ধ্যায় পুলিশ লাইন সংলগ্ন পুনাক ফুড পার্কে পাওনা টাকা দেয়ার জন্য আমাদের ডেকে নিয়ে যায় ইবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ।
সেখানে গিয়ে দেখি যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান মিজু, আনিসুর রহমান বিকাশ, বিপুল আহমেদ ও জাকির হোসেনসহ আরও ২-৩ জন উপস্থিত। পূর্ব কথামতো রাশেদ পাওনা টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করে এবং ঝড়ার সঙ্গে ঝগড়া, তর্কাতর্কি ও কথা কাটাকাটিতে লিপ্ত হয়।
তিনি আরও বলেন, এক পর্যায়ে সেখান থেকে রাত সোয়া ১০টার দিকে বেড়িয়ে মিজানুর রহমান মিজু, আনিসুর রহমান বিকাশ, বিপুল আহমেদের একটি সাদা রংয়ের গাড়িতে (কার) উঠে বাসার উদ্দেশে ফিরে আসি।
বাসার সামনে পৌঁছা মাত্রই ৪ জন লোক আমাদের ওপর হামলা করে। হামলার সময় গাড়িতে বসে থাকা মিজু ও বিকাশ বাইরে বের হননি।’ মিজু বিকাশ বিপুল ও রাশেদের যোগসাজসেই এই হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ লিপি খাতুনের।
ঝড়ার চাচা আব্দুর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘটনার পরে চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন জড়ো হওয়ায় হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
এ সময় স্থানীয়দের সাহায্যে গুরুতর জখম আয়শা সিদ্দিকা ঝড়াকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসকরা ভর্তি করলেও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন।’
অভিযোগের বিষয়ে রাশেদ আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার উপর অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এর কোনো সত্যতা নেই। রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে একটি পক্ষ আমার বিরূদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।’
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তাপস কুমার সরকার গণমাধ্যমকে জানান, ‘গত ১১ জুন রাত ১১টায় আয়শা সিদ্দিকা ঝড়া (৩০) নামে এক নারী রক্তাক্ত জখমে গুরুতর আহতাবস্থায় জরুরি বিভাগে আসেন।
তার পিছন দিক থেকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে দুই পায়ের লিগামেন্টসহ রক্ত নালী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
ওইদিন রাতেই তারা রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যায়।’ গত ১৫ জুন থেকে ঢাকাস্থ পঙ্গু হাসপাতালে ডা. নাজিম উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার পরিদর্শক তাপস কুমার পাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তদন্ত শুরু করেছি, কিছু প্রাসঙ্গিক আলামতসহ ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি।
সেগুলি বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা চলছে। আশা করি খুব শিগগিরই জড়িদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে পারবো।’