মহাকাশ ইন্টারনেট সংযোগ পুরো বিশ্বের গ্রামাঞ্চল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া বহুগুণে সহজ করে তুলবে। বসবাস ও জীবনধারণের পদ্ধতিতেই যুগান্তকারী পরিবর্তন আসতে পারে এর ফলে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ লিউক ম্যাকোমি যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করেন- এখানে নেই কোনও সেলুলার নেটওয়ার্ক বা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ।
তা সত্ত্বেও সম্প্রতি জাপানে আয়োজিত এক কনভেনশনে অনলাইনে অংশগ্রহণ করে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তা কীভাবে সম্ভব? আসলে ব্যক্তিগত স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করেই লাইভে এসেছিলেন তিনি।
মহাকাশে শত শত স্যাটেলাইট বসানো স্টারলিঙ্কের পরিষেবা যুক্তরাষ্ট্রের ব্রডব্যান্ড সংযোগের মতোই গতিসম্পন্ন, এর মাধ্যমেই ম্যাকোমিসহ অনেক মানুষ যেকোনো জায়গা থেকে নিজেদের কাজ সারতে পারছেন।
মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স- এর নতুন ইন্টারনেট পরিষেবার বেটা টেস্টিংয়ের অংশ হিসেবে এই সুবিধা পাচ্ছেন ম্যাকোমি দম্পতি। তাদের ভাষ্যে, এখন পর্যন্ত পাওয়া সুবিধায় তারা সন্তুষ্ট।
নিয়মিতই প্রতি সেকেন্ডে ১২০ মেগাবাইট ডাউনলোড স্পিড পাচ্ছেন তারা, অ্যান্টেনা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে তাপ নির্গত হওয়ায়; শীতকালেও বেশিরভাগ সময়েই ইন্টারনেট সংযোগ পেয়েছেন তারা। তবে সাম্প্রতিক তুষারঝড়ের পর অ্যান্টেনা পরিষ্কার করতে হয় তাদের।
তবে লাখ লাখ মানুষ স্টারলিঙ্কের পরিষেবা নিলে কি ধরনের গতিসম্পন্ন সংযোগ দেওয়া হবে- তা এখনো নিশ্চিত নয়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে ১০ হাজারের বেশি মানুষ এই পরীক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।
তবে পুরোপুরি চালু হওয়ার পর গ্রাহকসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে বর্তমানে গতির ভগ্নাংশ পেতে পারেন গ্রাহকরা। স্টারলিঙ্ক এবং এর প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলো শীঘ্রই তাদের প্রচারিত কাজ শুরু করলেও পুরো প্রক্রিয়া কার্যকর করতে তাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। অংশীদারত্বমূলক তারবিহীন স্পেকট্রামের জটিলতা ও মহাকাশ বর্জ্যের সমস্যা তো আছেই।
এছাড়াও, ইন্টারনেট পরিষেবার অন্য তিনটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন, ওয়ানওয়েব ও টেলেস্যাট পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগ প্রতিষ্ঠার কাজ করছে।
অদূর ভবিষ্যতেই সেলফোনের সিগন্যালের মতো সাধারণ বিষয়ে পরিণত হচ্ছে যাচ্ছে ব্যাপারটি। পরিষেবা পেতে খুব বেশি ব্যয় করতে হবে এমনও নয়; স্টারলিঙ্কের আপফ্রন্ট পরিষেবার বর্তমান মূল্য ৪৯৯ ডলার, মাসিক খরচ ৯৯ ডলার।
মহাকাশ ইন্টারনেট সংযোগ পুরো বিশ্বের গ্রামাঞ্চল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া বহুগুণে সহজ করে তুলবে। বসবাস ও জীবনধারণের পদ্ধতিতেই যুগান্তকারী পরিবর্তন আসতে পারে এর ফলে।
গ্রাহকরা ভৌগলিক দূরত্বের চিন্তা না করেই পছন্দমতো ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বেছে নিতে পারবেন। ফলে এ খাতের ব্যবহারকারী, আয়সহ পুরো দৃশ্যপটেই যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। তবে প্রচলিত টেলিকম কোম্পানিগুলো এর ফলশ্রুতিতে বিপাকে পড়বে- তাও বলার অপেক্ষা রাখে না।
স্টারলিঙ্কের পরিষেবা নিতে যে কাউকে নিবন্ধন করে অপেক্ষা করতে হবে, তবে নিবন্ধন করলেও আরও অন্তত এক বছর অপেক্ষার প্রহর গুণতে হবে আগ্রহীদের।
এক হাজার বা ততোধিক স্যাটেলাইটের মাধ্যমের এই পরিষেবা পাচ্ছেন স্টারলিঙ্কের বেটা গ্রাহকরা। পৃথিবীর কক্ষপথে বর্তমানে যতোগুলো স্যাটেলাইট প্রদক্ষিণ করছে, তার এক-তৃতীয়াংশই স্পেসএক্সের মালিকানাধীন।
তবে অন্য কথায় বলা যায়, স্পেসএক্সের যাত্রা সবে শুরু হল মাত্র। আরও ১২ হাজার স্যাটেলাইট স্থাপনের অনুমোদন পেয়েছে স্পেসএক্স।
স্টারলিঙ্কের নতুন এই পরিষেবার জন্য এমনিতেও তুলনামূলক বেশি স্যাটেলাইট প্রয়োজন। স্যাটেলাইটগুলো খুব দ্রুত অতিক্রম করে, পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠ থেকে তুলনামূলক কম দূরত্বে স্থাপন করা হয়েছে এই স্যাটেলাইটগুলো।
পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্যাটেলাইট স্থাপনের সুবিধা হল, এই কক্ষপথে স্যাটেলাইটগুলো সহজে পৃথিবীতে সিগন্যাল পাঠাতে পারে। ঠিক এই কারণেই পৃথিবীর যে কোনো স্থানে উচ্চ গতির ইন্টারনেট পরিষেবা দিতে পারছে স্পেসএক্স।
প্রচলিত টেলিকম ও স্যাটেলাইট সাধারণ পৃথিবী থেকে আরও বেশি দূরত্বে জিওসিনক্রোনাস কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে, নিরক্ষরেখা থেকে যার দূরত্ব প্রায় ২২ হাজার মাইল।
এই অবস্থানে প্রদক্ষিণের ফলে একই সময়ে পৃথিবীর বেশি অংশ স্যাটেলাইটের আওতায় আসে। কিন্তু এরফলে সিগন্যালের পৃথিবীতে গিয়ে আবার ফিরে আসতে, অর্থাৎ রাউন্ড ট্রিপে অনেক সময় লেগে যায়। একারণে ইন্টারনেট টেলিফোন পরিষেবা, ভিডিও চ্যাটিং ও বেশিরভাগ অনলাইন গেমের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়।
সব শর্তপূরণ সাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে ইন্টারনেট সংযোগের জন্য ৮৮৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ পাবে স্টারলিঙ্ক।
স্টারলিঙ্ক ও এর প্রতিদ্বন্দ্বীদের সামনের আরও অসংখ্য চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। তারবিহীন স্পেকট্রাম ব্যবহারের অনুমতি এর মধ্যে অন্যতম।
ওয়ানওয়েব, স্পেসএক্স ও অন্যান্য স্যাটেলাইট যোগাযোগ কোম্পানিগুলো নির্দিষ্ট তারবিহীন ব্যান্ড ব্যবহারের অনুমতি চাইছে। সব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারলেই হয়তো অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকেই অবিশ্বাস্য গতির ইন্টারনেট সেবা পাবেন বিশ্ববাসী।
- সূত্র: ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল