দশম ব্যাচের মেধাবী কর্মকর্তা সাহান আরা বানু। এখন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
যদিও তার পদটি গ্রেড ওয়ান কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি সচিব হতে পারেননি। অথচ তার চেয়ে পিছনে থাকা অনেকে সচিব হয়ে গেছেন। তেমনি, শেখ মুজিবর রহমান এখন খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
তিনিও দশম ব্যাচের একজন মেধাবী কর্মকর্তা। তিনিও সচিব হতে পারেননি। কিন্তু গ্রেড ওয়ান হয়েছেন। এরা দুজন ভাগ্যবান যে তারা গ্রেড ওয়ান হতে পেরেছেন কিন্তু তাদের ব্যাচের অনেক মেধাবী কর্মকর্তা রয়েছেন যারা এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত সচিব হিসেবেই দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের চেয়ে পিছিয়ে থাকা অনেকেই সচিব হয়েছেন।
একজন আমলার সর্বোচ্চ পদ হলো সচিব হওয়া। যে কোনো বিসিএস কর্মকর্তা যখন চাকরিতে ঢুকেন তখন তার চূড়ান্ত লক্ষ্য থাকে যে তিনি শেষ পর্যন্ত সচিব অবসরে যাবেন। কিন্তু বেশিরভাগ কর্মকর্তার কপালে সেটি জোটে না।
মেধার কারণে জোটে না, যোগ্যতার কারণে জোটে না, নানা রকম জটিলতা সমস্যা এবং চাকরি জীবনে নানা রকম প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণেই বাস্তবে সচিব হওয়া সকলের পক্ষে হওয়া সম্ভব হয়না।
আমাদের দেশের সরকারি চাকরির কাঠামোটা পিরামিড আদলে। অর্থাৎ নিচে অনেক বেশি কর্মকর্তা প্রবেশ করে, যত পদন্নোতি হতে থাকে তত ঝরে পড়ে। তারপর আস্তে আস্তে মাত্র কয়েকজনই সচিব হতে পারেন।
কিন্তু সরকারি কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ পদটি যেন যোগ্যতার ভিত্তিতে এবং মেধার ভিত্তিতে হয় সেটি দীর্ঘদিনের দাবি এবং প্রত্যাশা। তবে এই দাবি এবং প্রত্যাশা অধিকাংশ সময় পূরণ হচ্ছে না।
সাম্প্রতিক সময়ে অভিযোগ উঠেছে যে, আমলাদের মধ্যে একটা সিন্ডিকেট রয়েছে এবং এই সিন্ডিকেটে যারা পছন্দের ব্যক্তি তাদেরকেই সর্বোচ্চ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। সিন্ডিকেটের বাইরে থাকলে পদোন্নতি পাওয়া যায়না। পদোন্নতি এবং ভালো জায়গায় পোস্টিং বা যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট কাজ করে।
বিভিন্ন সময়ে আমলাদের একটি প্রভাবশালী মহল তৈরি হয়। যে প্রভাবশালী মহল আসলে পদোন্নতি এবং ভালো জায়গাগুলোতে পোস্টিং দেওয়া ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। আর সেই প্রভাবশালী আমলাদের যদি আস্থাভাজন এবং অনুগত না হওয়া যায় তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই পদোন্নতি হয় না।
বেশিদিন আগের কথা নয়, ৮৪ ব্যাচের অন্যতম মেধাবী কর্মকর্তা ছিলেন রোকসানা কাদের। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন এবং তার উদ্যোগে গ্যাবির সঙ্গে বাংলাদেশ চুক্তি করতে পেরেছিল। কিন্তু ওই মেধাবী কর্মকর্তা শেষ পর্যন্ত সচিব হতে পারেননি। এরকম সচিব হতে না পারার তালিকা অনেক দীর্ঘ অথচ তাদের ব্যাচের অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরাও সচিব হয়েছেন বলে সচিবালয়ে কান পাতলেই শোনা যায়।
এত গেলো সর্বোচ্চ পদ গ্রহণ নিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ। আবার অনেক সময় ভালো জায়গায় পোস্টিং পাওয়ার ক্ষেত্রেও একটা সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও কিছুদিন আগেও একটা শক্তিশালী সিন্ডিকেট ছিল। সেই সিন্ডিকেটের কারণে ড. মোজাম্মেল হোসেন খান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হতে পারেননি বলে গণমাধ্যমে লেখালেখি প্রকাশিত হয়েছিল। তবে মোজাম্মেল হোসেন খান সৌভাগ্যবান। তিনি সিনিয়র সচিব হয়েছেন। পরে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত পেয়েছেন।
এরকম অনেকেই আছেন যারা যোগ্যতাসম্পন্ন কিন্তু তারা ভালো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন না। ধর্ম মন্ত্রণালয় সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নুরুল ইসলাম। তিনি এক সময়ে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। কিন্তু চাকরি জীবনে এসে তিনি সচিব হতে পেরেছিলেন বটে কিন্তু তার যোগ্যতা অনুযায়ী আরেকটা ভালো মন্ত্রণালয় তার প্রাপ্য ছিল বলেই অনেকে মনে করেন।
এরকমভাবে মেধা এবং যোগ্যতা বিবেচনা না করে শুধুমাত্র একটা প্রভাবশালী গ্রুপের অনুগত হয়ে পদোন্নতি এবং ভালো পোস্টিং, সরকারি কর্মকর্তাদের শৃঙ্খলা এবং মেধার উৎকর্ষতা বিকাশের পরিপন্থী বলে অনেকে মনে করছেন। এখন সরকারি কর্মকর্তাদের যদি যোগ্যতা এবং মেধার ভিত্তিতে পদোন্নতি এবং পোস্টিং না হয় সেটি ভবিষ্যতে আমলাতন্ত্রের আরেকটি নতুন সংকট তৈরি করবে বলেও কেউ কেউ মনে করেন।
বাংলা ইনসাইডার