বগুড়া প্রতিনিধি: দীর্ঘ দেড় বছর ধরে মহামারি করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ বা লকডাউনে ছিল। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ, ব্লাকবোর্ডে পড়েছে ধুলার আস্তরন। গত ১১ আগস্ট থেকে সারাদেশে লকডাউন তুলে নেয়ার পর বন্ধই ছিল শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
তাইতো শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ও শিক্ষা পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভবনাকে চিন্তা করে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘোষণা করেন সরকার। এরপর থেকে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত করতে বগুড়ার প্রায় তিন হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পাঠ উপযোগ্য করতে সকল প্রস্ততি গ্রহন করেছে প্রতিষ্ঠান কতৃর্পক্ষরা।
সেগুলো ধোয়া-মোছার কাজ দ্রুত করে ইতিমধ্যে প্রস্তুত করে ফেলেছে। এছাড়া সরকার নির্ধারিত তারিখের মধ্যে শিক্ষকদের করোনার টিকা নেয়ার জণ্য তাগাদা দিচ্ছেন জেলা শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা।
সরকার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে পাঠদান শুরু করার যে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে সব ধরনের পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে। করণীয় নির্দেশনা বাস্তবায়নের শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়ে মিটিং, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে ক্লাস রুমগুলোতে এক বেঞ্চ পর পর শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য বিধি মানতে মাস্ক ছাড়া কোন শিক্ষার্থীকেই ক্লাসে ঢুকতে না দেয়া, শিক্ষার্থী প্রবেশে হ্যান্ড সেনিটাইজার, তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য ইতিমধ্যে এসব স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানেরা।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানা যায়, এ জেলায় তালিকাভুক্ত মোট ৮৬২টি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ বিদ্যালয় ৪৩৯টি, কলেজ ৮২টি, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ২৮টি, কারিগরি কলেজ ৪৯টি, এবং মাদ্রাসা ৩১৩টি। এর বাইরেও বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। অপরদিকে জেলার ১২ উপজেলায় মোট এক হাজার ৬০৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৪৩৬টি কে,জি স্কুল রয়েছে।
শেরপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আল মাহমুদ কমল বলেন, আমরা কলেজে প্রবেশ পথে শিক্ষার্থীদের জন্য হাত ধোওয়ার জন্য সাবান ও হ্যান্ড সেনিটাইজারসহ পানির ট্যাপের ব্যবস্থা রেখেছি। কলেজের প্রতিটি কক্ষ এবং বাহিরের সকল জায়গা পরিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার প্রায় সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের
শেরপুর উপজেলা কিন্ডার গার্টেন এসোসিয়েশনের সভাপতি সামিট স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালক সাইফুল ইসলাম লিপু জানান, সরকারি নিদের্শনা মোতাবেক আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস শুরুর জন্য আমরা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধোয়া-মোছা করে প্রস্তুত রেখেছি। স্কুলে প্রবেশসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রথম দিন থেকে ক্লাস শুরু করা হবে।
বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদাৎ আলম ঝুনু জানান, যে কোন মূহুর্তে তার স্কুল খুলে দেয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। শিক্ষকদের শতভাগ টিকা নেয়া নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রতিদিন রুটিন মাফিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচ্ছন্ন করা হয়ে থাকে। স্কুল-কলেজ পরিচ্ছন্নতার কাজ জোরেসোরে শেষ করা হয়েছে।
জেলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন জানান, তার স্কুলের সৌচাগার থেকে শ্রেনীকক্ষ পরিচ্ছন্ন করার কাজ চলেছে। প্রায় সকল শিক্ষক টিকা নিয়েছেন। বিদ্যালয়টি শতভাগ প্রস্তুত। তবে সরকারি নির্দেনা নিশ্চিত করে বিদ্যালয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস চলবে।
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ শাহজাহান আলী জানিয়েছেন, তারা ক্যাম্পাসের ভেতরে এবং প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের সামনে শিক্ষার্থীদের জন্য বেসিনের মাধ্যমে হাত ধোওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সুরক্ষা সাগ্রমীর ব্যবস্থা রেখেছেন। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মানছে কি’না তা তদারকির জন্য বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি), রোভার স্কাউট এবং রেডক্রিসেন্টের কলেজ ইউনিটকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বগুড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাহমিনা খাতুন জানান, জেলার প্রতিটি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেনী কক্ষ, ক্যাম্পাস, পরিচ্ছন করতে নির্দেশনা ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন করছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারগণ। বিদ্যালয়ে হ্যান্ড ওয়াস অথবা সাবান রাখার ব্যবস্থা সহ প্রাথমিক বিদ্যলয়গুলোর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার শতভাগ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯ হাজারের মধ্যে ৪ হাজার শিক্ষক করোনা টিকা নিয়েছেন। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠনের সকলকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জেলা শিক্ষা অফিসার হজরত আলী জানান, তিনি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের করোনার টিকা নেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেনী কক্ষ ও শৌচাগার পরিস্কার করে পাঠদানের উপযোগী করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে জেলায় ৪৩৯ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল ৩১৩ টি মাদ্রাসা, ১৮৩ টি কলেজের শিক্ষকগনের মধ্যে ৫০ শতাংশ শিক্ষক করোনা টিকা নিয়েছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানখোলার আগে শিক্ষকদের শতভাগ টিকা নিতে বলা হয়েছে। তবে করোনার প্রকোপ যদি বৃদ্ধি পায় সেক্ষেত্রে সরকারি যে নির্দেশ আসবে, সেই নির্দেশ মেনে চলবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড-১৯ সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার ১০দিনের মাথায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এরপর ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে (কোভিড-১৯)করোনার সংক্রমণ কমে আসায় চলতি বছরের মার্চে সরকারের পক্ষ থেকে একবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
তবে এ ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই করোনার সংক্রমণ আবারও বেড়ে গেলে সরকার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। এরপর সরকারের নিদের্শনা অনুযায়ী আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণার পাশাপাশি আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে মেডিকেল কলেজগুলো এবং আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে বিশ^বিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়ার ঘোষণা রয়েছে।