সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।
সংসদে যখন তিনি হেফাজতের ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে কথা বলেছেন ঠিক তখন দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মী এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা হেফাজতের পক্ষে কথাবার্তা বলছেন।
এটি আওয়ামী লীগের নতুন মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত পত্রপত্রিকার হিসাব অনুযায়ী ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের প্রায় ৯ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে মামুনুল হকের প্রতি সমর্থন জানানো এবং হেফাজতের প্রতি সহানুভূতি জানানোর জন্য।
শুধু আওয়ামী লীগ নয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থারও কারও কারও হেফাজতের প্রতি সহানুভূতিসূচক বিবৃতি দেখা গেছে। অনেক স্থানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কেউ কেউ হেফাজতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে সরকারের হাতে তথ্য প্রমাণ এসেছে।
প্রশ্ন উঠেছে আওয়ামী লীগ যে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করে, যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে অসাম্প্রদায়িক এবং ধর্মনিরপেক্ষ চেতনায় বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন সেই আওয়ামী লীগের ভেতর এতো হেফাজত ঢুকলো কীভাবে?
আওয়ামী লীগের নেতারাই বলছেন যারা প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছেন এরা উগ্র হেফাজতী এবং এরা আওয়ামী লীগের ভেতরে ছিলো। এরা আওয়ামী লীগের ভেতরে এখনও আছেন এবং দলে থাকার জন্য হেফাজতের পক্ষে প্রকাশ্যে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন না কিন্ত হেফাজতের প্রতি সহানুভূতিশীল।
আর এই কারণে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হেফাজতীদের তালিকা করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থাসহ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যে সংগঠনের মধ্যে এতো হেফাজত ঢুকলো কেন? কেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের তরুণরা হেফাজতের পক্ষে ফেসবুকে কথাবার্তা বলছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, একাধিক কারণ রয়েছে এর পেছনে।
১. অনুপ্রবেশকারী: গত ১২ বছরে আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রচুর অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। এরা সুবিধা আদায়ের জন্য আওয়ামী লীগে ঢুকেছে। এরা আওয়ামী লীগের আদর্শে বিশ্বাস করে না। আর এরাই আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি বড় অংশ হেফাজতী।
২. ভোট পাওয়ার জন্য মাদ্রাসার সঙ্গে সম্পর্ক: আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ভোট পাওয়ার জন্য মাদ্রাসাগুলোর সঙ্গে এক ধরনের সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। আর এভাবে মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন করতে গিয়ে হেফাজতকে আলিঙ্গন করেছেন। আর এ কারণে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে হেফাজতীদের বসানো হয়েছে। স্থানীয় এমপি-মন্ত্রী বা প্রভাবশালী নেতারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করার জন্য হেফাজতের সঙ্গে যে সমঝোতার রাজনীতি করেছেন সেজন্য অনেক অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী লীগে ঢুকেছে।
৩. রাজনীতিতে আদর্শভিত্তিক চর্চা না থাকা: আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আদর্শভিত্তিক চর্চা না থাকা এবং দলের ভেতর প্রশিক্ষণ কর্মশালা ইত্যাদি না থাকার কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আদর্শচ্যুতি এবং এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। সেখান থেকে হেফাজতের প্রতি সহানুভূতি তৈরি হতে পারে।
৪. হেফাজতের সঙ্গে সমঝোতার নীতি গ্রহণ: ২০১৩ পর থেকে সরকার হেফাজতের সঙ্গে যে সমঝোতার নীতি গ্রহণ করেছে সেই সমঝোতা নীতির মাসুল দিতে হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন হেফাজত তাদের শত্রু নয় বন্ধু। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে এক ধরনের আরষ্ঠতা ছিলো।
তারা হেফাজতের বিরুদ্ধে এক ধরনের কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করতেন। আর এসব কারণেই আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেক হেফাজতীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন, যে আওয়ামী লীগ তার আদর্শ থেকে কখনও সরে যাবে না। যারা বিভ্রান্তকর ভুল রাজনীতির শিকার তাদেরকে চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলা ইনসাইডার