দেশে রাজনীতি নেই। আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে কোন রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব মাঠে নেই। তাতে কি? আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এখন রাজনীতির প্রধান ইস্যু।
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের দ্বন্দ্ব এবং পাল্টাপাল্টি অবস্থান রাজনীতিকে মাঝে মাঝেই একটা দমকা হাওয়া দেয়। আর সারাদেশেই আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত।
স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে অন্তঃকলহ, অন্তদ্বন্দ্ব নতুন কোন বিষয় নয়। কিন্তু এর বাইরে অনেক সময় পরিচিত নেতাদের পরস্পরের বিরোধ প্রকাশ্য হয় সেটি রাজনীতিতে কিছুটা হলেও রোমান্স তৈরি করে। আর এরকম একটি রোমান্স তৈরি হয়েছে গতকাল এবং আজ।
সাঈদ খোকন-শেখ ফজলে নূর তাপস: ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন এক অভিযোগ দায়ের করে এবং সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাঈদ খোকনের আটটি ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আর এতে সাঈদ খোকন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেছেন, এ জন্য ঢাকা দক্ষিণের বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসই দায়ী। দুজনের এই পাল্টাপাল্টি অবস্থান এবারই নতুন নয়। এর আগে গুলিস্তানের ফুলবাড়ীয়ায় দোকান বরাদ্দ নিয়েও দুই নেতা পাল্টাপাল্টি অবস্থানে গিয়েছিলেন। সে সময় সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল তাপসপন্থীরা। সাঈদ খোকন ছিলেন দক্ষিণের প্রথম মেয়র।
এরপর তিনি মনোনয়ন পাননি। তার বদলে মনোনয়ন পান শেখ ফজলে নূর তাপস। আর এখান থেকে দুজনের বিরোধের সূত্রপাত। এই বিরোধ মাঝে মাঝে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে উত্তপ্ত হাওয়া ছড়ায়।
বাহাউদ্দিন নাছিম-শাহজাহান খান: বাহাউদ্দিন নাছিম ও শাহজাহান খানের বিরোধ আওয়ামী লীগের অনেক পুরনো বিরোধ। শাহজাহান খান করতেন জাসদ, আওয়ামী লীগ এসেছেন। আর এখন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। আর বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
এই দুই হেভিওয়েটের লড়াইয়ে মাদারীপুর মাঝে মাঝে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আর এটি দলীয় রাজনীতির গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় রাজনীতিতেও ইস্যু হয়ে ওঠে।
নিক্সন চৌধুরী-কাজী জাফরউল্লাহ: কাজী জাফরউল্লাহ আওয়ামী লীগের হেভীওয়েট নেতা। তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য। আর নিক্সন চৌধুরী আওয়ামী পরিবারের একজন সদস্য। একবার তিনি যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। কাজী জাফরউল্লাহর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিক্সন চৌধুরী দু`দুবার বিজয়ী হয়েছেন।
আর তাই ফরিদপুরে এখন নিক্সন চৌধুরীর রাজত্ব, কাজী জাফরউল্লাহ কোণঠাসা। কিন্তু দুজনের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে মাঝে মাঝেই রাজধানীতে কিছু কৌতুকের তৈরি হয়।
একরাম চৌধুরী-কাদের মির্জা: একরাম চৌধুরী নোয়াখালী আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং নোয়াখালী রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। কিন্তু তার রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জা।
কাদের মির্জা-একরাম চৌধুরীর বিরোধ এখন নোয়াখালী ইস্যু নয়, জাতীয় রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুই নেতা কথার যুদ্ধ থেকে মাঝে মাঝেই অস্ত্রের যুদ্ধে লিপ্ত হন এবং ও প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। এখনো দুই নেতার মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি চলছে।
মোমেন-মান্নান বিরোধ: আওয়ামী লীগের দুই মন্ত্রী ড. আব্দুল মমিন এবং এম এ মান্নান। একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অন্যজন পরিকল্পনামন্ত্রী। দুই মন্ত্রী সজ্জন মানুষ হিসেবে পরিচিত কিন্তু এলাকার রেল স্টেশন স্থাপন নিয়ে দুই মন্ত্রীর বিরোধ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত বিষয়। দুইজন দুইজনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কথা বলেছেন।
তারা দুজনই জাতীয় পর্যায়ের নেতা না হলেও দুজনই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এবং এই দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর বিরোধ রাজনীতিতে কিছুটা হলেও নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের খোরাক জুগিয়েছে।
আওয়ামী লীগের এই অভ্যন্তরীণ কোন্দল নতুন নয়। একটা সময় আওয়ামী লীগের মধ্যে খুনি মোশতাকের সঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদের দ্বন্দ্বের কথা শোনা যেত। পঁচাত্তর-পরবর্তী রাজনীতিতে রাজ্জাক-তোফায়েল সারাদেশে আলোচিত বিষয় ছিল।
আমু-তোফায়েলের দ্বন্দ্ব নিয়েও কম কথাবার্তা হয়নি। কিন্তু এই সমস্ত বিরোধীদের মধ্যে একটি রাজনৈতিক আদর্শের ব্যাপার ছিল। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগের যে বিরোধগুলো হচ্ছে তা স্রেফ কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতার বিরোধ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বাংলা ইনসাইডার