করোনায় এখন সারাদেশে লকডাউন চলছে। তবে সবচেয়ে বেশি লকডাউন লক্ষণীয় রাজনীতির মাঠে। রাজনীতি শূন্য বাংলাদেশে করোনার প্রকোপের কারণে রাজনীতি আরো নির্বাসিত হয়েছে।
এই নির্বাসিত রাজনীতিতে শুধুমাত্র মূল্যায়ন, সমালোচনা, অতীতাশ্রয়ী চিন্তা ভাবনা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাই শোনা যাচ্ছে। আর এ সমস্ত আলাপ-আলোচনায় মুখ্য হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ সংগঠন হিসেবে শক্তিশালী করা না করা, আওয়ামী লীগের অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ আলোচনা।
এসব আলোচনায় সবচেয়ে বেশি যেটি এসেছে তা হলো আওয়ামী লীগ সংগঠন হিসেবে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই দুর্বলতার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে নানা মুনির নানা মত যেমন পাওয়া যাচ্ছে তেমনি একটি বিষয় সকলে ঐক্যমত। তা হলো আওয়ামী লীগের জন্য একজন পূর্ণকালীন কার্যকর সাধারণ সম্পাদক প্রয়োজন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সে কারণে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটি সবসময় স্পর্শকাতর, আবেগময় এবং গুরুত্বপূর্ণ।
শুধু তিনি সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তা নয়, দলকে শক্তিশালী করার জন্য, দল গোছাতে তিনি মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে দলের সাধারণ সম্পাদক পদকে শ্রেয়তর মনে করেছিলেন।
সে থেকে আওয়ামী লীগের মধ্যে দল এবং সরকারকে আলাদা করার একটি নৈতিক ভিত্তি তৈরি হয়েছে, যেটি সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুসরণ করার চেষ্টা করছেন।
যদিও এটি পুরোপুরি করতে পারেননি তারপরও দলের সিংহভাগ নেতাকে তিনি মন্ত্রিত্বের বাইরে রেখেছেন। কিন্তু ভাগ্যবান কয়েকজন আছেন যারা মন্ত্রী এবং দলের নেতাও হয়েছেন।
তাঁদের দুই একজন ছাড়া কেউই দুটো দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারছেন না বলেই মনে করছেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের যেই সংকট সেই সংকটগুলো নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে নানারকম মুখরোচক আলোচনা হচ্ছে।
এইসব আলোচনায় যেমন দলের চেইন অব কমান্ড নষ্ট হওয়া, দলের পাতি নেতাদের জাতীয় নেতাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা ইত্যাদি নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে তেমনি সংগঠন গোছানোর একটি রূপকল্প নেতাকর্মীদের আলাপ-আলোচনায় ভেসে আসছে।
নেতাকর্মীরা অধিকাংশই মনে করছেন যে, আওয়ামী লীগের মতো একটি ব্যাপক বিস্তৃত সংগঠনে একজন পূর্ণকালীন সাধারণ সম্পাদক দরকার। যেই সাধারণ সম্পাদক কর্মঠ হবেন এবং তিনি এলাকার সব মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
সকলে তার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন এবং যিনি হবেন আসলে দলের প্রাণকেন্দ্র। যাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং কর্মী বাহিনীর সঙ্গে যিনি হবেন একটি সেতুর মতো, যার মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীরা তাদের অভাব, অভিযোগ, অনুভূতি, আবেগ ইত্যাদি দলের সভাপতির কাছে জানাতে পারবেন।
যিনি দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিতদেরকে চিহ্নিত করতে পারবেন এবং তাদেরকে প্রকৃত মর্যাদার জায়গা দিতে পারবেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এমন একজন সাধারণ সম্পাদক চান যিনি দলের অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে শুধু কথাই বলবেন না, কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এমন একজন সাধারণ সম্পাদক চান যিনি দলের সংগঠনের ভেতর বিভক্তি নিজে উস্কে দেবেন না বরং বিভক্তিকে তিনি দমন করার জন্য নির্মোহ নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এমন একজন সাধারণ সম্পাদক চান যার কথার কথাগুলো মানুষ গ্রহণ করবে, বিশ্বাস করবে, আস্থায় নিবে এবং যে সমস্ত কথাবার্তাগুলো নিয়ে হাস্যরস হবে না, জনগণের তামাশার বিষয়ে পরিণত হবে না।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এমন একজন সাধারণ সম্পাদক চান যিনি দলের কর্মীদেরকে শাসন করবেন, আবার আদর করবেন, পক্ষপাত করবেন না, নিজের আত্মীয়-অনাত্মীয় বিবেচনা করে কর্মীদের প্রতি আচার-আচরণের পার্থক্য করবেন না।
আর এরকম একজন সাধারণ সম্পাদকের জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অপেক্ষা করতে চান না। তারা মনে করেন যে, করোনার প্রকোপের পরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন হওয়া উচিত এবং এটি হওয়া উচিৎ চলতি বছরেই।
একজন তরুণ, প্রতিশ্রুতিশীল, সম্ভাবনাময় এবং যোগ্য সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগে দরকার। যিনি শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবেন তেমনি দলকেও গুছিয়ে নিবেন।
বাংলা ইনসাইডার