আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত নেতৃবৃন্দের সংখ্যা ক্রমশ কমে এসেছে। অনেক জনপ্রিয় জাতীয় নেতৃবৃন্দের মৃত্যুর পর এখন হাতেগোনা কয়েকজন নেতা আছেন আওয়ামী লীগে যাদেরকে আওয়ামী লীগ সভাপতির পর জাতীয় নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
যাদের সারাদেশে পরিচিতি আছে, জনপ্রিয়তা রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সঙ্কটে এবং ইস্যুতে দেখা যাচ্ছে যে সিনিয়র নেতারা কথা বলছেন না। তাদের এই নীরবতা কেন এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে কথা উঠছে।
অবশ্য আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ বলেছেন যে, তারা দলে গুরুত্বহীন এবং তাদের সহায়তা চাওয়া হয়নি জন্যই তারা নীরবতা পালন করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে অন্যতম ইস্যু ছিল হেফাজত।
হেফাজত ইস্যুতে প্রথম দিকে আওয়ামী লীগের জাতীয় পর্যায়ের হেভিওয়েট নেতারা কোন কথাই বলেননি। তারপর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন এবং তোফায়েল আহমেদ কিছু কথা বলেছেন।
কিন্তু অন্য কয়েকজন নেতা এ নিয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন কথা বলেনি। যদিও এই হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ, রাজনৈতিক অঙ্গনে তার পদচারণা খুবই কম।
সাম্প্রতিক সময়ে রোজিনা ইস্যুতেও রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার চেষ্টা হয়েছিল কিন্তু এই ইস্যুতেও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদেরকে তেমন কথা বলতে দেখা যায়নি।
বরং রোজিনা ইস্যুতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, আর শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকেই সোচ্চার দেখা গেছে। রোজিনা ইস্যুতে সিনিয়র নেতাদের নীরবতা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে কথা উঠেছে।
বেগম খালেদা জিয়াকে যখন বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়া হলো না তখন রাজনৈতিক অঙ্গন গরম হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সে গরম রাজনৈতিক অঙ্গনে কথার উত্তাপ ছড়াননি এই সমস্ত সিনিয়র নেতারা।
দেখা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন সংকটে বা রাজনৈতিক ইস্যুতে সিনিয়র নেতারা দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন। এর কারণ কি এ নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় নেতৃত্ববৃন্দের সঙ্গে কথা বলে মোটামুটি যে কারণগুলো পাওয়া গেছে তার মধ্যে-
১. করোনা পরিস্থিতি এবং তাদের বার্ধক্যজনিত সমস্যা। এই সিনিয়র নেতারা করোনা পরিস্থিতির কারণে নিজেদেরকে স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইন করে রাখছেন। এর ফলে তাদের চলাফেরা সীমিত হয়ে গেছে। এটি একটি বড় কারণ যে রাজনৈতিক ইস্যুতে এবং বিভিন্ন সঙ্কটে তারা নীরব।
২. দলে তাদের গুরুত্ব কমে যাওয়া। অনেক সিনিয়র নেতা অভিযোগ করেছেন যে দলের সাধারণ সম্পাদক বা অন্যরা তাদেরকে দলীয় কার্যক্রমে আমন্ত্রণ জানান না বা কোন ইস্যুতে বক্তব্য রাখার জন্য অনুরোধ করেন না।
এজন্য গুরুত্বহীন হয়ে থাকার কারণে তারা মনে করছেন যে তাদের নীরব থাকাই ভালো।
৩. তারা এসব ইস্যু নিয়ে দিকনির্দেশনাহীন কি বলতে কি বলা হয়ে যায় সে নিয়ে তারা এক ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে থাকেন। এ কারণেই তারা রাজনৈতিক ইস্যুগুলোকে এড়িয়ে যাচ্ছেন।
তবে বিভিন্ন মহল মনে করেন যে, আওয়ামী লীগের যে সমস্ত হেভিওয়েট নেতারা আছেন তাদের কথা সাধারণ মানুষ শুনতে চায় এবং বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের বক্তব্যগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাই রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি রাজনৈতিক ইস্যুতে কথা না বলেন তাহলে তাদের রাজনীতি অপূর্ণ রয়ে যায়।
বাংলা ইনসাইডার