করোনার কারণে দেড় বছর শিক্ষাজীবন বন্ধ। বিসিএস পরীক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। ৪৪ তম বিসিএস পরীক্ষায় অনেকে বয়সের কারণে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে না।
এরকম একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে সরকার এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশন চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়টি চিন্তাভাবনা করছেন। সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলছেন, তারা বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা করছেন এবং ইতিবাচকভাবে ভাবছেন।
ইতিমধ্যেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে এক ধরনের মেরুকরণ চলছে। আর এটি যেন কখনো আন্দোলনে রূপ না নেয় তার আগেই সরকার চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা করছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বর্তমানে চাকরিতে যোগদানের বয়সসীমা সাধারণ নাগরিকদের জন্য ৩০ বছর। এটি বাড়িয়ে ৩২ বছর করার একটি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
করোনায় সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স অনেকে হারিয়েছেন বলে জানা গেছে। ৪৪ তম বিসিএস পরীক্ষার যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে, সেটি প্রকাশের পর আবেদনের ক্ষেত্রে সরকার চাকরি প্রার্থীদের যে বয়স বেধে দেওয়া হয়েছে সেটিকে বাড়ানোর ব্যাপারে পিএসসি ইতিমধ্যে কাজ করছে বলে পিএসসির একজন উর্ধ্বতন সদস্য নিশ্চিত করেছেন।
সরকারি সূত্রগুলো বলছে যে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৪৪তম বিসিএস এর কার্যক্রম শুরু করেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে ক্যাডারদের চাহিদা`র কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। সব কয়টি একত্র করে সমপরিমাণ ক্যাডার নিয়োগ দিতে পিএসসিকে নির্দেশনা দেবেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
কিন্তু এই চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা যেটি আছে সেটি যদি থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে অনেকেই এই বিসিএস পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে পারবেন না। আর এই প্রেক্ষিতেই মনে করা হচ্ছে যে সরকার এবং পিএসসি এ ব্যাপারে আলাপ আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত নেবে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩০ বছর হলেও বিসিএস স্বাস্থ্য, জুডিশিয়াল ক্ষেত্রে ৩২ বছর। অন্যদিকে বিভিন্ন কোটার ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩২ বছর।
১৯৯১ সালে সরকারি চাকরিতে বয়সের সীমা শেষবার ২৭ থেকে ৩০ বছর করা হয়েছিল। তখন দেশের গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর। এরপর ২০১১ সালে এসে অবসরের বয়স বেড়ে হয় ৫৯ বছর এবং বীর মুক্তিযোদ্ধার বয়স হয় ৬০ বছর।
অবসরের এই দুই-তিন বছর বাড়ার কারণে একসময় তেমন চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় নি। ১৯৯১ সাল থেকে ২০২১ এই ৩০ বছরের ১৬ বছর গড় আয়ু বেরে হয়েছে ৭৩ বছর।
কিন্তু চাকরিতে বয়স বাড়েনি একটুও। আর এ কারণেই অনেকে মনে করছেন যে চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো দরকার। তবে চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর পাশাপাশি গড় আয়ু বৃদ্ধির প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে এখন অবসরের বয়সসীমাও বাড়ানোর চিন্তাভাবনা রয়েছে।
বিশেষ করে বাংলাদেশে এখন যেহেতু গড় আয়ু ৭৩ বছর। একজন ৫৯ বছরে সবচেয়ে কর্মক্ষম অবস্থায় থাকেন এবং তিনি সেই সময় পরিণত হন। এই সময় তাকে অবসরে যেতে হয়।
এই বিষয়টি নিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য যে, বর্তমান সরকারই চাকরির বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করেছেন।
আর এ কারণেই এখন যেহেতু মানুষের কর্মক্ষমতা বেড়েছে এবং আমাদের সরকারের পরিধি বেড়েছে, এ জন্য সরকারি চাকরিতে অবসরের সময়সীমাটি নিয়েও নতুন করে ভাবা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য যে বর্তমান সরকারি চাকরি`র কাঠামোতে বেশকিছু ধরনের অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। সাধারণ সরকারি চাকরিতে ৫৯ বছর থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৬৫ বছর চাকরি করছেন।
আবার হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকরা ৬৫ বছর চাকরি করছেন। এটি`র একটি সমন্বয় সাধন করা প্রয়োজন বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।
বাংলা ইনসাইডার