অতীত কুকীর্তি ঢাকতেই গুজব ছড়াচ্ছে বিএনপি : বাংলাদেশ ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল টানা পাঁচ বছর দুর্নীতিতে ছিল চ্যাম্পিয়ন। বিএনপির ভাষ্যমতে বিষয়টা কাকতালীয়, এ সময় অন্য কোনো দেশ বাংলাদেশ থেকে বেশি দুর্নীতি করেনি।
সে কারণেই বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন! অবশ্য বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তার দুই পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিভিন্ন দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে বহির্বিশ্বে লজ্জাজনক এক পরিচিতি পায় বাংলাদেশ।
সেই বিএনপি-জামাত এখন শেখ হাসিনা আর তার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্যের খেলায় মেতে উঠেছে। কারণ তার আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিরোধিতা করাই তাদের একমাত্র কাজ।
বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করাই তাদের মুল উদ্দেশ্য। তারা তাদের অতীত ঢাকতে চায়। মানুষের নজর থেকে তাদের অতীত মুছে ফেলার জন্য তারা নিয়মিত মিথ্যচার করছে।
কিভাবে তারা মিথ্যাচার করে আসুন একনজর দেখে নেই-
বেগম খালেদা জিয়া জনসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের একাউন্টে ৩০০ মিলিয়ন ডলার জমা আছে বলে দাবি করেছিলেন।
যারা কিছুদিন আগে গুজব ছড়িয়েছিল – শেখ হাসিনা ৩০০ লাগেজ সুটকেস ভরা টাকা নিয়ে ইউরোপ গেছে
একবার ভেবে দেখুন তো ৩০০ লাগেজ ভরা টাকা নিয়ে কি প্রকাশ্যে বিমানে করে নিয়ে কোথাও যাওয়া সম্ভব?
আজকে তারাই গুজব ছড়াচ্ছে যে LTM নামের সজীব ওয়াজেদের একটি কোম্পানি আছে তাকে কাজ দেওয়া হয়েছে ইনফো সরকার – ৩ প্রোজেক্ট এর।
অথচ তারা জানেই না যে LTM মানে একটি ক্রয় প্রক্রিয়ার নাম – কোন কোম্পানির নাম না।
এরাগেও সজীব ওয়াজেদ জয়ের একাউন্টে ৩০০ মিলিয়ন ডলার জমা আছে বলে দাবি করেছিলেন খালেদা জিয়া।
অথচ এফবিআইএর এক এজেন্টকে ঘুষ দিয়ে জয়ের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টার মামলার নথি নিজের বক্তব্যের ভিত্তি হিসেবে ধরে নিয়েছেন খালেদা জিয়া। বেগম খালেদা জিয়া মামলার কোন নথিতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের একাউন্টে ৩০০ মিলিয়ন ডলার আছে বলে তথ্য পেয়েছেন, তা তিনি বলতে পারেননি।
এভাবেই মিথ্যা ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার কাজ করে যাচ্ছে বিএনপি এবং তারেক পরিচালিত গুজব ফ্যাক্টরিগুলো।
এবার আসুন দেখে নেই খালেদা জিয়া, তার দুই ছেলের যত প্রমাণিত দুর্নীতিগুলোঃ
চারদলীয় ঐক্যজোট সময়কালে বাংলাদেশে দুর্নীতি অনেকটা শিল্পের পর্যায়ে চলে যায়। বলা হতো যে কোনো কাজে ‘তারেক ট্যাক্স’ দিতে হয়, না হলে কাজ হয় না।
১।কোকোর সিমেন্সের দুর্নীতি
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে ঘুষ দেয়ার কথা স্বীকার করে সিমেন্স। বিভিন্ন অভিযোগ ও সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে মার্কিন জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট আরাফাত রহমান কোকোর কয়েকটি ব্যাংক হিসাব উল্লেখ করে ২০০৯ সালের ৮ জানুয়ারি সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের মামলা করে। এই ব্যাংক হিসাবগুলোতে ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার গচ্ছিত ছিল। আরাফাত রহমান কোকো সিমেন্স এবং চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাছ থেকে তার অ্যাকাউন্টে ঘুষ হিসেবে নিয়েছিল ওই টাকা। মার্কিন বিচার বিভাগ কোকোর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করার মামলা করেছিল।
২। তারেক ও মামুনের মানি লন্ডারিং
মার্কিন ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে ঘুষ ও মানি লন্ডারিং নিয়ে তদন্ত করেছে এবং বাংলাদেশের আদালতে তাদের বিরুদ্ধে এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন এফবিআইয়ের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি।
৩। নাইকো দুর্নীতি কেলেঙ্কারি
কানাডার কোম্পানি নাইকোকে অনৈতিকভাবে সুবিধা দেয়ার বিনিময়ে একটি দামি গাড়ি উপহার পেয়েছিল নাইকোর কাছ থেকে, যার আর্থিক মূল্য ছিল কানাডিয়ান ডলারে ১ লাখ ৯০ হাজার ৯৮৪ ডলার। নাইকো আরও ৫ হাজার কানাডিয়ান ডলার ঘুষ দিয়েছিল মোশাররফকে তার সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের জন্য। আর নাইকো এ কে এম মোশাররফ হোসাইনকে ওই ঘুষ দিয়েছিল এটা নিশ্চিত করতে যে, নাইকো বাংলাদেশ থেকে তাদের ঠিক করা দামে গ্যাস কিনতে পারবে, তা বিক্রি করতে পারবে এবং গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণের কারণে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত জরিমানা আরও কমানো হবে।
৪। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি: জিয়াউর রহমানের নামে একটি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করে ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার হাতিয়ে নেয়।
৫। জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি: তারেক রহমান অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দেশের এতিমদের জন্য বিদেশি দাতা সংস্থা থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ টাকার অনুদান আত্মসাৎ করে।
৬।বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি:
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে কন্ট্রাক্টর নিয়োগে ১৫৯ কোটি টাকা ঘুষ হিসেবে আদায় করেছে জিয়া পরিবার। জিয়া পরিবারের এগুলো দুর্নীতি সব প্রমানিত।মিথ্যা বানোয়াট কিংবা গুজব নয়।
এসব দুর্নীতির প্রমাণ জানার জন্য সরকারের নথির প্রয়োজন নেই , ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে এক গোপন তারবার্তায় লিখেছিলেন–‘তারেক রহমান বিপুল পরিমাণ দুর্নীতির জন্য দায়ী যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে… সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান অত্যন্ত দুর্ধর্ষ ও ভয়ংকর এবং একটি দুর্নীতিপরায়ণ সরকার ও বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতীক।
তারেক রহমানের প্রকাশ্য দুর্নীতি মার্কিন সরকারের তিনটি লক্ষ্যকে, যথা: গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, উন্নয়ন এবং জঙ্গিবাদ নির্মূল করার মিশনকে প্রচণ্ডভাবে হুমকির সম্মুখীন করেছে… আইনের প্রতি তার প্রকাশ্য অশ্রদ্ধা বাংলাদেশে জঙ্গিদের মূল শক্ত করতে সহায়তা করেছে।’ যা উইকিলিকসে প্রকাশিত হয়!
আসুন অনিয়মে ভরা দুর্নীতিগ্রস্ত, সন্ত্রাসী দল বিএনপি-জামায়াতের গুজবে বিভ্রান্ত না হই।
সূত্র: ঢাকা টেলিভিশন