37 C
Dhaka
Friday, April 19, 2024

আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি: অনেক দূর যেতে হবে: পরিকল্পনা নিয়েছি: প্রধানমন্ত্রী

বিডিনিউজ ডেস্ক | ঢাকা | ১৯শে আগস্ট, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, ৪ঠা ভাদ্র, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ , শরৎকাল, ১১ই মহর্‌রম, ১৪৪৩ হিজরি

চাকুরির খবর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিদ্যমান উন্নয়নের ধারা বজায় রেখে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি সকালে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের পরিকল্পনা বিভাগের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত সচিব সভায় এই নির্দেশ দেন। সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের একটাই লক্ষ্য তৃণমূল পর্যায়ের মানুষগুলো যেন উন্নত জীবন পায়।’

একটি দক্ষ সেবামুখী জবাবদিহীতামুলক প্রশাসন গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করে সুশাসন প্রতিষ্ঠাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমাদের ভবিষ্যতে আরও অনেক দূর যেতে হবে এবং সে পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। আমাদের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বা ডেল্টা প্ল্যান, সেগুলো মাথায় রেখে আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং সেগুলোর বাস্তবায়ন যেন যথাযথ ভাবে হয়।

তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়ন হতে হবে সুষম উন্নয়ন। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষগুলো যেন গ্রামেই সব ধরণের নাগরিক সুবিধা লাভের মাধ্যমে জীবন-জীবিকার সুবিধা পায়। কৃষক-শ্রমিক-মেহনতী জনতার জন্য এমনভাবে কাজের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে কাজে তাদের উৎসাহ বাড়ে।

তারা উন্নত জীবন পায়, দারিদ্রের হাত থেকে মুক্তি পায়, অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার সুযোগ পায়। বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে ভবিষ্যতেও যেন সেভাবে এগিয়ে যেতে পারে। সেভাবে আমাদের কার্যক্রম চালাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসবের ভিত্তি তাঁর সরকার কাজের মাধ্যমে তৈরী করেছে। যেটা ধরে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেই কথা মাথায় রেখেই সব সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

তাঁর সরকার যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব মন্ত্রণালয় এবং সচিবদের ওপর বর্তায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যার যার মন্ত্রণালয়ে যে যে প্রকল্প রয়েছে সেগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় সেদিকে সবাইকে নজর দিতে হবে।

এটা করতে পারলেই দেশের অর্থনীতিকে তাঁর সরকার গতিশীল রাখতে পারবে উল্লেখ করে তিনি সচিবদের আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নতুন দায়িত্ব প্রাপ্ত সচিবদের অধীনস্থ দপ্তর বা অধিদপ্তর এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এ ব্যাপারে নিয়মিত বৈঠক করে তাদের সমস্যাবলীর খোঁজ-খবর করার আহ্বান জানান।

কেননা, কোন কাজে কোথাও যেন স্থবিরতা দেখা দিতে না পারে, বলেন তিনি।

তিনি এ সময় সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, আবাসনের সুযোগ, গাড়ি ক্রয় করা বা গাড়ি রক্ষনাবেক্ষণে সরকারি সহায়তা দেয়ার তথ্য তুলে ধরে বলেন, তাঁর নিজেরও একটা চাওয়া আছে আর সেটা হচ্ছে তাঁর সরকারের কাজগুলো যেন দ্রুত বাস্তবায়ন হয় এবং মানসম্পন্ন হয়।

দেশ অর্থনৈতিক ভাবে যত এগুতে পারবে ততই এ ধরনের সুযোগ সুবিধা আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
একটি দক্ষ জনমুখী জবাবদিহীমূলক সেবাধর্মী প্রশাসন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই একটি দক্ষ সেবামুখী জাবাবদিহীমূলক প্রশাসন গড়ে উঠবে। যা দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারবে এবং সেটাই সব থেকে বেশি কার্যকরী হবে। কারণ, বাংলাদেশে আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

শেখ হাসিনা এ সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র পুণরোল্লেখ করে বলেন, অনেক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি এবং দেশের উন্নতিও হচ্ছে কাজেই কোন ধরণের দুর্নীতিকে সহ্য করবো না। কারণ, এটা হচ্ছে একটা ব্যাধি।
এই ব্যাধি থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হবে, উল্লেখ করে তিনি সচিবদেরকেও এ বিষয়ে কঠোর হবার নির্দেশ দিয়ে বলেন, যেখানেই দুর্নীতি দেখবেন সেখানেই আপনাদের কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ সময় মুজিববর্ষে দেশের সকল ভূমিহীন-গৃহহীণকে ঘর করে দেওয়ার মাধ্যমে ঠিকানা গড়ে দেয়ায় তাঁর সরকারের অঙ্গীকার পুণর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী এই কর্মসূচি যেন আরেকটু বেগবান হয় এবং সুষ্ঠু রূপে সম্পাদন হতে পারে তার প্রতি নজর দেওয়ার জন্যও সচিবদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবকিছু পরিকল্পনামাফিক করে তাঁর সরকার যদি এগিয়ে যেতে পারে তবেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছা সহজ হবে।
এজন্য তিনি যত্রতত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে কৃষি জমি নষ্টের পাশাপাশি পরিবেশ যেন বিপন্ন করা না হয় এবং সরকার নির্দিষ্ট শিল্পাঞ্চলেই যেন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্যও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের প্রতি নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, যত্রতত্র শিল্প গড়ে উঠবে না। অর্থনৈতিক অঞ্চলেই শিল্প হবে। পরিবেশ বাঁচাতে হবে, দূষণ প্রতিরোধ করতে হবে এবং সর্বোপরি আবাদি কৃষি জমি রক্ষা করতে হবে।
তিনি এ সময় কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দেশের জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজার সম্প্রসারণের এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণেরও পরামর্শ দেন।
রপ্তানি পণ্য বৃদ্ধির পাশপাশি দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশেও উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমাদের তো একটাই লক্ষ্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন এবং বাংলাদেশটাকে তিনি উন্নত সমৃদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। আমরা সে লক্ষ্য পূরণে কাজ করছি। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির পিতার ১০১ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করছি। যে সময়ে এই সভাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
তিনি এ সময় স্বাধীনতার পর দ্রুততম সময়ে মিত্রবাহিনীকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও সম্ভ্রমহারা নারীদের পুণর্বাসন, দেশের ধ্বসে পড়া অবকাঠামো ও কলকারখানা সংস্কার করে সরকারিকরণ, আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন, সংবিধান প্রণয়ন, শিক্ষা কমিশন গঠন, প্রশাসনিক চাকরি পুণবিন্যাস কমিটি ও বেতন কমিশন গঠন, বিশে^র বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি আদায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য পদ গ্রহণ, পরিকল্পনা কমিশন গঠন করে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহনের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ায় জাতির পিতার বিভিন্ন পদক্ষেপের অনুপুঙ্খ বর্ননা দেন।
এসময় বাংলাদেশে আসা জাতিসংঘের একটি সংস্থা ইউনাইটেড নেশন রিলিফ অপারেশন টিম ইন ঢাকা (ইউএনআরওডি) এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী একটি যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশকে গড়ে তুলে কিভাবে জনগণের অন্নের সংস্থান করে জাতির পিতা দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় কাজ করে গেছেন তারও উদ্ধৃতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা কেবল স্বাধীনতাই এনে দেননি আন্তর্জাতিকভাবে একটি মর্যাদারও সৃষ্টি হয়েছিলেন তখন। কিন্তু দেশের কিছু মানুষের বেইমানীর জন্য আমরা সেই অবস্থানটা ধরে রাখতে পারলাম না। জাতির পিতা বেঁচে থাকলে আরো অনেক আগেই এদেশ উন্নত সমৃদ্ধ হতে পারতো বলেও আক্ষেপ ব্যক্ত করেন তিনি।
শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, ১৫ আগস্টের সকল শহিদ এবং মুক্তিযুদ্ধের শহিদ এবং সম্ভ্রমহারা মা-বোনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা যেন কোন ভাবে ব্যর্থ না হয়। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশের পথে।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণের শেষ পর্যায়ে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টিতে সকলকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানিয়ে স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়ার বিষয়ে তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া দরকার এবং সেটা খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু বিশ^বিদ্যালয়গুলো নয় আমাদের স্কুলগুলোও খুলে দেয়া। অবশ্য আমি ধন্যবাদ জানাই আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তারা এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, এটা এখন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, বাচ্চাদের ঘরে থাকতে থাকতে যথেষ্ট কষ্ট হচ্ছে। কাজেই, সেদিকে আমাদের নজর দেয়া দরকার।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশেই ভ্যাকসিন উৎপাদনের উদ্যোগের উল্লেখ করে বলেন, ইতোমধ্যে দেশে ভ্যাকসিন তৈরী এবং বোলজাত করার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। আর যত ভ্যাকসিন লাগে সেটাও আমরা ক্রয় করবো এবং সেজন্যও ব্যবস্থা নিয়েছি।

- Advertisement -

আরও সাম্প্রতিক খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সর্বশেষ খবর