33 C
Dhaka
Wednesday, April 24, 2024

আগে পণ্য, পরে টাকার পক্ষে সবাই

বিডিনিউজ ডেস্ক

চাকুরির খবর

ই-কমার্স ব্যবসায় আগে পণ্য সরবরাহ করে পরে টাকা নিতে সরকার যে নিয়ম বেঁধে দিয়েছে তার পক্ষে মত দিয়েছেন এ খাতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এর ফলে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে একটা আস্থার জায়গা তৈরি হবে। সুদৃঢ় হবে ই-কমার্স।

দেশে ই-কমার্স ও এফ-কমার্স দুই ধরনের ডিজিটাল বাণিজ্য হয়। ইলেকট্রনিক কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) আওতাভুক্ত সদস্য সংখ্যা ১ হাজার ৬০০।

এ খাতে বছরে গড়ে ২ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। এর বাইরে ফেসবুকনির্ভর ই-কমার্স (এফ-কমার্স) উদ্যোক্তার সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি।

এদের অনেকের বিরুদ্ধে পণ্যমান, দাম, আগাম পেমেন্ট, অবিশ্বাস্যরকম মূল্যছাড়, ডেলিভারির দীর্ঘসূত্রিতা, এক পণ্য দেখিয়ে নিম্নমানের অবিকল আরেক পণ্য গছিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এই ধরনের অপতৎপরতা রোধে চীন, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ আইন করে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কড়াকড়ি বজায় রাখা হয়।

এতে করে সেসব দেশে কোনো কোনো ই-কমার্স সাইট ক্যাশ অন ডেলিভারি বা আগে টাকা পরে পণ্য অফার প্রথায় ব্যবসা করলেও তা নিয়মের মধ্যে পরিচালিত হয়।

ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছানোর একটা নিশ্চয়তা থাকে। এমনকি পণ্য ক্রেতার পছন্দ না হলে তা ফেরত দিয়ে পরিশোধ করে টাকা ফিরে পাওয়ারও সুযোগ রয়েছে।

ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশে। দেশে এ ধরনের স্বতন্ত্র কোনো আইন নেই। নেই ডিজিটাল বা ই-কমার্স খাত পরিচালন সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট নীতিমালাও।

এর মধ্যে অবশ্য নীতিমালার একটা খসড়া তৈরি হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষ হলে তা নিয়মমাফিক এ খাতে প্রয়োগ করা হবে।

সেটিও সময় সাপেক্ষ হওয়ায় তার আগে দেশে এই ধরনের ডিজিটাল বাণিজ্যকে একটা শৃঙ্খলায় আনতে এবং ভোক্তার স্বার্থ সুরক্ষায় গত বৃহস্পতিবার ‘আগে পণ্য, পরে টাকা’ এমন নিয়ম চালু করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

নতুন এই সিদ্ধান্তকে কীভাবে দেখছে ই-কমার্স খাত সংশ্লিষ্টরা। এতে দেশের ই-কমার্স খাতের ব্যবসায় কোনো নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হবে কিনা তা জানতে যোগাযোগ করা হয় ই-ক্যাবভুক্ত কয়েকজন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।

তাদের প্রায় সবাই বলেছেন, ‘আগে পণ্য, পরে টাকা’ সরকারের চালু করা এই নতুন নিয়মের পক্ষে তারা। বিষয়টি খাতসংশ্লিষ্টদের কোনো সমস্যা তো হবেই না, উল্টো সম্ভাবনাময় ই-কমার্স খাতের সুষ্ঠু বিকাশে আরও সহায়ক হবে।

তবে এই ব্যবসার আড়ালে যাদের ভোক্তা ঠকিয়ে আখের গোছানোর ধান্ধা রয়েছে, তারা সমস্যায় পড়লেও পড়তে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

গুটিকয়েক অসৎ ব্যবসায়ীদের দায় গোটা ই-কমার্স খাত নিতে চায় না উল্লেখ করে তারা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

অবাক বিষয় হলো, দেশে সাম্প্রতিক সময়ে যে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রতারণা সম্পর্কিত সবচেয়ে বেশি অভিযোগ সেই ই-ভ্যালিও দাবি করছে এটি খুব ভাল সিদ্ধান্ত। এতে ই-ভ্যালির ব্যবসায় কোনো সমস্যা হবে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আজকের ডিল ডটকমের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তে ই কমার্স সাইটে মুখোশ পরে থাকা অসুস্থ সদস্যদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ হবে।

‘এই সিদ্ধান্তের কারণে অনেকের অর্থ মিডলম্যান প্রতিষ্ঠানের কাছে সাময়িক আটকা থাকলেও পণ্য ডেলিভারির নিশ্চয়তা সাপেক্ষে তা তো অ্যাকাউন্টে আসবেই।

তাই এতে ই-কমার্স ব্যবসার কোনো ক্ষতি হবে না। বরং নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া একটি খাতের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত দরকার ছিল।’

আসকা ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী সুলতানা পারভীন বলেন, ‘যদি সরকার সঠিক রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন দিয়ে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গেটওয়ের মাধ্যমে পেমেন্ট এনশিওর করতে পারে তাহলে বলব, বায়ার ও সেলার উভয়ের জন্যই এটা উপকারী হবে।’

এটুএ বিজনেস লিঙ্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরমান হোসেন দাবি করেন, দেশ এখন উন্নতদের স্তরে পৌঁছেনি। ফলে অনলাইন লেনেদেন ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে একটা অবিশ্বস্ততা দৃশ্যমান।

এক্ষেত্রে সরকার পেমেন্টের ক্ষেত্রে মাঝখানে যে গেটওয়ে সিস্টেম চালু করেছে তা ভোক্তার সংশয় যেমন দূর করবে। একই সঙ্গে বিক্রেতাকেও দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরণে অভ্যস্ত করবে। নিয়মটি খুব ভাল হয়েছে। এতে ব্যবসার কোনো সমস্যা হবে না।

বাগডুম-এর পরিচালক সৈয়দা কামরুন আহমেদ জানান, বিষয়টি নির্ভর করবে সরকার মিডলম্যানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই গেটওয়ে এবং তার পরবর্তী সিস্টেমটা কতটা সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তার ওপর।

কারণ এটা পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর একটা ব্যবস্থা। যদি দেখা যায়, ক্রেতা পণ্য পাওয়ার পরও মিডলম্যান ক্যাশ পেমেন্টে দেরি করছে তাহলে এর একটা ক্ষতিকর প্রভাব তৈরি হতে পারে। এটা বাদ দিলে ক্রেতা-বিক্রেতার বিশ্বস্ততা প্রতিষ্ঠার জায়গায় এই নতুন যোগসূত্রটি খুবই ভালো উদ্যোগ।

অল মার্কেট বিডির স্বত্বাধিকারী প্রশান্ত কুমার মন্ডল এক কথায় জানান, মিডলম্যানের মাধ্যমে গেটওয়ে সিস্টেমটি ই-কমার্স খাতের ব্যবসাকে একটা আস্থার জায়গায় নিয়ে আসবে। এটা সবার জন্য ভাল হয়েছে।

যোগান ডটকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, ‘নিয়ন্ত্রত সিস্টিমেটিক ওয়ে সবার জন্যই ভাল। তবে আমরা সৎভাবে বিজনেস করেও কিছু অসৎ লোকের জন্য সাফার করছি।

কারণ, আমার বিজনেস তো গ্রোসারি পণ্যের। অর্ডার পাওয়া মাত্রই প্রোডাক্ট সাপ্লাই করি। সেখানে ক্রেতাদের বেশির ভাগই নগদ টাকা দেয়। খুব কম লোকই ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিটকার্ড ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে কী হবে তার একটা সুরাহা হওয়া দরকার।’

আয়োজন ডটকম বিডির প্রধান নির্বাহী মো. রাব্বি জানান, উদ্যোগটি ভাল। বিশ্বস্ততার একটা জায়গা তৈরি হলো। তবে যে সিস্টেমটি ব্যবহার হবে তার প্রয়োগ যেন যথাযথ হয়।

এ প্রসঙ্গে ই-কমার্স খাতের সংগঠন ইলেকট্রনিক কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহাব উদ্দিন শিপন জানান, তাদের সংগঠনের ১৬০০ সদস্য রয়েছে।

“তারা সবাই ‘আগে পণ্য, পরে টাকা’- এর পক্ষে। সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেই নিয়েছে। এর মানে হচ্ছে এই সিদ্ধান্তে আমাদের সম্মতি রয়েছে। সংগঠনের সিদ্ধান্ত মানেই সদস্যদের সবার সিদ্ধান্ত।”

এক প্রশ্নের জবাবে শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘কিছু অভিযোগ তো আমরা পাচ্ছি। সবাই কিন্তু সেটা করছে না। অথচ দায় সবাইকে নিতে হচ্ছে। এতে পুরো ব্লোমিং একটা খাত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এর রাশ টেনে ধরতেই আমরা নিয়ন্ত্রণের পক্ষে। কেউ-ই তো আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’

ই-কমার্স ব্যবসায় আগে পণ্য দিয়ে পরে টাকা নিতে বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে সময়ের আলোচিত ও বিতর্কিৃত প্রতিষ্ঠানটি ই-ভ্যালি।

প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল জানান, এতে তাদের কোনো সমস্যা হবে না। তার মতে, এর ফলে গ্রাহক, বিক্রেতা, ই-কমার্সসহ পুরো ইকো সিস্টেমই উপকৃত হবে।

কিউকমের প্রধান রিপন মিয়া সরকার এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও দেশে ই-কমার্সের ব্যবসা নতুন হওয়ায় এতে এ খাত কতটা খাপ খাইয়ে নিতে পারবে তা নিয়ে কিছুটা সংশয়ও প্রকাশ করেন।

- Advertisement -

আরও সাম্প্রতিক খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সর্বশেষ খবর