তানজিলা আক্তার লিজা, ডিআইইউ প্রতিনিধি: নাম আমার ছোঁয়া। বয়স আমার আট এর পর নয় এ পা দিবো। গরিবের মেয়ে আমি ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে বাচঁতে সকাল হতে সারাদিন ফুল বিক্রি করি বিভিন্ন স্থানের পার্কে পার্কে।ফুল বিক্রি করে কিছু টাকা নিয়ে মায়ের হাতে দেই।
সকালে হাতে করে দুলিয়ে দুলিয়ে এক ঝুড়ি গোলাপ নিয়ে চলি বিভিন্ন উদ্যানে । এই,” ফুল বিক্রিওয়ালী” একটি গোলাপ ফুল দেও তো। সবার কাছে ফুল বিক্রি করতাম এক মিষ্টি মুখর হাসি মেখে ঠোঁটে।
হঠাৎ একদিন এক সাহেব ডাকলো, এই শুনো,” আমাকে একটি ফুল দেওতো “। আমি তার কথা মতো ফুল ঝুড়ি থেকে বের করতে না করতেই সে আমার বুক স্পর্শ করে।
আমি সাথে সাথে তার পাশ থেকে সরে যাই ঐ মুহূর্তে এক দৌড়ে চলে যাই চা বিক্রেতা নানার দোকানে। একদম চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কী বলবো, কী করবো বুঝতে না পেরে আবার দৌড়ে বাসায় চলে যাই। সাথে সাথে মাকে জড়িয়ে ধরি।
কীরে আজকে বুঝি অনেক বেশি ফুল বিক্রি হয়েছে। আচ্ছা, আর জড়িয়ে ধরা লাগবে না। এতদিন যে, আবদার করছিলি রেশমি লাল চুড়ির জন্য তা কিনে দিবো। নে ছাড়তো এখন আমাকে।
মায়ের দিকে তাকাতেই, মা আবার বলে উঠলো, ছোঁয়া কী হয়েছে? মা তোর, তুই কান্না করছিস কেনো?
মাগো বয়স তো মাত্র নয় আমার। আমার মাঝে ও যৌন ঘ্রাণ খুজেঁ পেলো পার্কের সাহেব রা। মাগো, নারীদের সাথে এমন কেনো হয়?….তাহলে কোন মুখে আমি বলবো, ” আমি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক “?.. যেখানে পেটের টানে কিছু টাকা উপার্জন করতে ফুল বিক্রি করি সেই সুযোগে এমন অনৈতিক কাজ এই দেশের কিছু অমানুষরা করে।
মাগো, তাহলে রত্না আপার কথাও সত্যি। উনিও বাসে চলার পথে যৌন হয়রানির শিকার হন। ট্রাফিকে আটকে থাকা নীলা আফাও বলছিলো, সেই অসভ্য রিক্সা চালকের অশ্লীল কথা।
বকুল আপা তো শালীনতা পোশাক পরেও রেহাই পেলো না তাও যিনি তার শিক্ষক ছিলেন সে এমন জঘন্যতম অনৈতিক আচরণ করে বকুল আপার সাথে।
শিউলি আন্টি সে তো তার গার্মেন্টসের বসে্র যৌন হয়রানির জন্য গার্মেন্টসের কাজ টি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।মাগো, কেনো হচ্ছে এমন?..আমি তো ছোট আমাকে ও ছাড়লো না।
মা,জানিনা এমন অমানুষ গুলো কবে মানুষ হবে। মা তুই, আর ছেলেদের কাছে ফুল বিক্রি করবি না। তুই সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরে আসবি।
এমন যৌনহয়রানি প্রতিদিন, প্রত্যেকটি সময় প্রতিটি মুহূর্তে আশেপাশে ঘটে যাচ্ছে নারীদের সাথে। স্বাধীন বাংলাদেশ বলতে আমরা সকলেই স্বাধীন নারী-পুরুষ উভয়ই।
যৌন হয়রানির মতো এমন অনৈতিক কাজ যেখানেই দেখবেন সকলেই এগিয়ে আসুন অমানুষদের চিহ্নিত করে ধরিয়ে দেন।